রাফাল চুক্তিতে রিলায়েন্সের প্রবেশ ছিল বাধ্যতামূলক, ড্যাসল্টের গোপন নথি প্রকাশ করল ফরাসি জার্নাল। আরও অস্বস্তিতে কেন্দ্র

তিন দিনের ফ্রান্স সফরে গেছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারণ। ভারতের জন্য সেখানে যে ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান তৈরি করছে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন, সেই কাজ খতিয়ে দেখবেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, আরও বেশ কয়েকটি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার জন্য সেখানে তাঁকে অনুরোধ করতে পারে ড্যাসল্ট কর্তৃপক্ষ।
এরই মাঝে রাফাল চুক্তি নিয়ে নয়া বোমা ফাটাল ফরাসি তদন্তমূলক জার্নাল ‘মিডিয়াপার্ট’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডি টিভি’ র রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘মিডিয়াপার্ট’ নামের ওই ফরাসি জার্নালটি রাফাল চুক্তি নিয়ে একটি আর্টকেল লিখেছে। সেখানে এই চুক্তির প্রধান সংস্থা রাফাল প্রস্তুতকারী ড্যাসল্টের কিছু গোপন নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ওই নথিতে নাকি স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ভারতের থেকে এই যুদ্ধ বিমানের বরাত পেতে রিলায়েন্সের সাথে চুক্তি করা ছিল বাধ্যতামূলক। অন্যথায়, এই চুক্তি করা যেত না। ‘এনডি টিভি’র খবরে প্রকাশ, ‘মিডিয়াপার্ট’ এর আর্টিকেলে দাবি করা হয়েছে, তারা ড্যাসল্টের যে নথি পেয়েছে তাতে নাকি সেই সংস্থার এক কর্তা স্পষ্ট করে লিখেছেন, ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে ভারতের জন্য এই যুদ্ধ বিমান বানাতে হলে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় সংস্থার সাথে মূল চুক্তির অফসেট ক্লজ এর আওতায় অংশীদারিত্বের চুক্তি করতে হবে ড্যাসল্টকে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পরই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তবে কি কেন্দ্রের নির্দেশেই এই চুক্তির অংশীদার করা হল অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স অ্যাভিয়েশনকে? রাহুল গান্ধীসহ বিরোধীদের দাবিই কি ঠিক?
কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অভিযোগ, রাফাল চুক্তির আওতায় ‘অফসেট ক্লজ’এর মাধ্যমে অনিল আম্বানীর সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে ৩০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দিতে, ফ্রান্সের ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ইপিএ আমলে ১২৬ টি এয়ারক্রাফট কেনা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা হঠাৎ বাতিল করে ওই একই সংস্থার কাছ ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার নয়া চুক্তি করে মোদি সরকার।
অভিযোগকারীদের দাবি, দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় ফ্রান্সের সাথে এয়ারক্রাফট কেনা নিয়ে ভারতের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে ফ্রান্সের প্রযুক্তি সম্বলিত ১০৮ টি এয়ারক্রাফট ভারতেই নির্মাণ করার কথা ছিল হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল এর। বিরোধীদের অভিযোগ, হ্যাল যাতে ওই বরাত না পায় এবং রিলায়েন্সকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই মোদী সরকার গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে নয়া চুক্তি করে ফ্রান্সের সাথে।
এই বিতর্ক সম্প্রতি আরও বাড়ে ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রসোঁয়া ওলাদের এক দাবির পর। তিনি দাবি করেন, ভারতের সাথে রাফাল চুক্তির সময় ‘অফসেট ক্লজ’ এর আওতায় ড্যাসল্টের সাথে রিলায়েন্স ডিফেন্সের যে অংশীদারিত্বের চুক্তি হয়েছিল তাতে ফরাসি সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু ভারত সরকারের তরফেই ড্যাসল্ট এর কাছে শুধুমাত্র অনিল আম্বানীর ওই সংস্থার নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল। ফলে অন্য বিকল্প না থাকায় রিলায়েন্স ডিফেন্সের সাথেই চুক্তি করে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন। যদিও মোদী সরকারের তরফে ওলাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ওই অফসেট চুক্তিতে কোনও ভূমিকা তাদের ছিল না। কিন্তু প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য সামনে আসার পরই আরও তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নামে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি, প্রশান্ত ভূষণরা দাবি করেছেন,  এ চুক্তির মাধ্যমে যে সুবিধা অনিল আম্বানীর সংস্থাকে নরেন্দ্র মোদী পাইয়ে দিয়েছেন, তাতে আগামী ৪০ বছর আর্থিক সুবিধা পাবে এই সংস্থা। সিবিআই তদন্তেরও দাবি করেছেন তাঁরা। রাফাল চুক্তির সমস্ত নথি চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরই মধ্যে ফরাসি পত্রিকা ‘মিডিয়াপার্ট’এর খবর প্রকাশ্যে আসায় আরও বেকায়দায় মোদী সরকার।

Comments are closed.