করোনাভাইরাস: চিনে মৃত্যু ১০০ ছাড়াল! কতটা প্রস্তুত ভারত? দেখে নিন, এদেশে ভাইরাস সংক্রমণের সাম্প্রতিক ইতিহাস।

চিনে মহামারির আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, এক রাতের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চিনের সরকারি স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৫১৫। যা সোমবার বিকেল অবধি ছিল ২,৮৩৫।

 

উহান
Picture Courtesy: TheHill

 

মধ্য চিনের উহান শহরে এই রোগের কথা প্রথম শোনা যায়। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চিনের স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। ১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যু হয়। উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার আছে। সেখানে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছ কেনাবেচা চলে। সেই বাজারে গিয়েছিলেন এমন কিছু ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। উহানের ওই বাজারে জীবন্ত বাদুড়, খরগোশ এবং সাপ বিক্রি হত। অনেকেই এই সব খেতে ভিড় জমাতেন অবৈধ বাজারে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মতে, হয়ত এগুলোর কোনও একটি থেকে এই নতুন ভাইরাস প্রথম মানবদেহে ঢোকে।

 

উৎস জানা গেলেও, এখনও অবধি প্রতিকার সম্বন্ধে কিছুই হদিশ পাওয়া যায়নি। এদিকে করোনাভাইরাস ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে চিনের সীমানা পেরিয়ে থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকাতেও। ভারতে এই ভাইরাস যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে।

 

সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন ভাইরাস থাবা বসিয়েছে বহু দেশে। এক দশক আগে সিভিয়র অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স নামে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল। তাতে গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৮০০ মানুষের। সার্সে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজারেরও বেশি। ২০১২ সালে প্রাদুর্ভাব ঘটে মিডল ইস্টার্ন রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা মার্সের। তাতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বহু।

 

corona-virus

 

এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক, শেষ যে ৩ টি ভাইরাসের প্রকোপে ত্রাহি রব উঠেছিল ভারতের নাগরিক জীবনে। ভাইরাসের কথা বললেই প্রথমেই মনে পড়ে নিপা ভাইরাসের কথা। ২০১৮ সালে কেরলে প্রাদুর্ভাব হয় ফলের উপর ঘুরে বেড়ানো মাছি থেকে ছড়ানো এই ভাইরাসের। আক্রান্ত হন প্রায় পাঁচশো মানুষ। মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের। কিন্তু এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় নজিরবিহীন তৎপরতা দেখিয়েছিল কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার। যোগ্য সঙ্গত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর ফলেই ভয়াবহ আকার নিতে পারেনি নিপা ভাইরাস।

 

নিপা ভাইরাসের ঠিক আগে ২০১৭ সালে ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল জিকা ভাইরাস। মূলত মশাবাহিত এই ভাইরাস থেকে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। ভাইরাসের আয়ু মোটের উপর ২ থেকে ৭ দিন। প্রসূতিদের এই ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন জটিল সমস্যা হয়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন প্রায় সব বয়সের মানুষই।

 

২০১৭ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাতের আহমেদাবাদে প্রথম ধরা পড়ে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ। জুলাই মাসে জিকার দেখা মেলে তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি জেলায় এক ব্যক্তির দেহে। এছাড়া রাজস্থানের জয়পুরে তৃতীয় স্থান হিসেবে ওই বছরই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে সরকারিভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নেই।

 

২০০৬ সালে ভারতে ধরা পড়ে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস। তবে প্রথমবার ১৯৬৩ সালে কলকাতায় ধরা পড়েছিল চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই চিকুনগুনিয়ার কথা শোনা গিয়েছে ঠিকই, তবে তা কখনওই প্রবল আকার নিতে পারেনি। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বারবার ঘুরে-ফিরে এসেছে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কথা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চিকুনগুনিয়াও মিউটেশনের মাধ্যমে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ফিরে আসতে পারে।

 

এবার প্রশ্ন হল, ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামলাতে কি তৈরি ভারত? বিশেষজ্ঞরা সাফ জানাচ্ছেন, না। শুধু ভারত নয়, গোটা দুনিয়াতেই বর্তমান স্বাস্থ পরিকাঠামোয় করোনাভাইরাসের সামাল দেওয়া অসম্ভব। তার প্রধান কারণ, এক্ষেত্রে কী করতে হবে তা অজানা। তবে সুবিধার জায়গা একটিই, তা হল, চিন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাকে ভারতে প্রয়োগ করতে পারবেন এখানকার চিকিৎসকেরা।

Comments are closed.