মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দু’দিনের ভারত সফর নিয়ে সাজো সাজো রব উঠেছে দিল্লিতে। শনিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে ট্রাম্পের যে সফরসূচি পাওয়া গিয়েছে, তা হল, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা বারোটায় ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে আমেদাবাদ বিমানবন্দরে নামবেন ট্রাম্প। বেলা সাড়ে বারোটায় মোতেরা স্টেডিয়ামে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। সঙ্গে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিকেল সাড়ে তিনটেয় আগ্রার উদ্দেশে রওনা দেবেন। বিকেলে সূর্যাস্তের আগেই পৌঁছে তাজমহল দর্শন (মেলানিয়া তেমনটাই চান)। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন ট্রাম্প। পরের দিন সকাল দশটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হবে। বেলা এগারোটায় তিনি রাজঘাটে যাবেন মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বেলা বারোটায় হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। হবে একাধিক মউ সই। বিকেল তিনটেয় মার্কিন দূতাবাসে ভারতীয় বাণিজ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ব্যাঙ্কোয়েট, রাত দশটায় আমেরিকার উদ্দেশে রওনা।
মোতেরার অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে বিপুল আয়োজন করা হয়েছে। আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২২ কিমি দীর্ঘ রাস্তার দু’ধারে দুই লক্ষ মানুষকে দাঁড় করানো হবে, থাকবে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। শহরের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কথা বলা হয়েছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও। এরই মধ্যে ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, আমি শুনেছি, এক কোটি মানুষ উপস্থিত থাকবে আমেদাবাদে। বিমানবন্দর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তায় ৬০ লক্ষ মানুষ নাকি আমার জন্য হাজির থাকবে।
মোতেরায় ট্রাম্পের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনকে অনেকে তুলনা করছেন ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের সংবর্ধনার সঙ্গে। ওইদিন রামলীলা ময়দানে এক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল। এদিকে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। গত সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার টেক্সাসে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানের আদলেই মোতেরার এই কর্মসূচি। বিরোধীরা বলছেন, টেক্সাসের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এখানে কি বিরোধীদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে? বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানান, নমস্তে ট্রাম্পের আয়োজন করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাগপরিক অভিনন্দন সমিতি। তারাই ঠিক করেছে আমন্ত্রিতদের তালিকা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা ট্যুইটে মোদীর কাছে জানতে চেয়েছেন, এই সমিতি কবে হল? কে তার মাথা? এক বেসরকারি সংস্থার অনুষ্ঠানের জন্য গুজরাত সরকার কেন ১২০ কোটি টাকা খরচ করছে?
ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আটকে রয়েছে। মোদীর ইচ্ছে ছিল, ট্রাম্পের এই সফরেই চুক্তি হয়ে যাক। কিন্তু ট্রাম্প পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সফরে কোনও ছোট ধরনের বাণিজ্য চুক্তিও হবে না। তিনি বলেছেন, মোদীকে আমি পছন্দ করি ঠিকই। কিন্তু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের থেকে আমরা ভালো ব্যবহার পাইনি। কয়েকদিন আগেই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজারের দিল্লি আসার কথা ছিল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করার জন্য। কিন্তু তাঁর সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায়। তখনই বিদেশ মন্ত্রক বুঝে যায়, চুক্তি হচ্ছে না। ফলে মোদী সরকার অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছে। তবু কেন্দ্রীয় সরকার ট্রাম্পের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখছে না।
Comments are closed.