বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। চিনের পাশাপাশি মালেয়েশিয়া, ফান্সেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের খোঁজ মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের।
ঠিক কতটা ভয়ানক এই ভাইরাসের প্রকোপ, এর লক্ষণ বা এর থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী, তা নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম ভাইরাস বিশেষজ্ঞ তথা মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ক্লিনিকাল মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক সুদীপ রায়ের সঙ্গে।
প্রশ্ন: করোনাভাইরাস কী, এর প্রকৃতিই বা কী?
ডক্টর সুদীপ রায়: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে করোনাভাইরাস আসলে করোনাভিরিডি পরিবারের এক সদস্য। এখনও পর্যন্ত মোটামুটি এই পরিবারের অন্তর্গত ৫-৬ টি ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ও মানব শরীরের বিপদের ক্ষেত্রে দেখতে গেলে ইতিহাস বলছে যথেষ্ট শক্তিশালী এই ভাইরাস। প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায় এই ভাইরাসে আক্রান্তদের।
প্রশ্ন: করোনাভাইরাসের প্রকোপ কী এই প্রথম?
ডক্টর সুদীপ রায়: এর আগেও একাধিকবার বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে। কিন্তু করোনাভিরিডি পরিবারের এবারের এই ভাইরাসটি, যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা হু নোভেল করোনা ভাইরাস বলছে, তার প্রকোপ সম্ভবত এই প্রথম।
প্রশ্ন: উট বা ভাম বেড়ালের মাংস থেকেই এবার নোভেল করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে?
ডক্টর সুদীপ রায়: মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিরাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু চিনারা যেহেতু বিভিন্ন প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে৷ তাই এবার কোন প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে তা অন্তত এই প্রাথমিক পর্যায়ে বলা কঠিন।
প্রশ্ন: মানবদেহে কী করে এর সংক্রমণ ঘটে?
ডক্টর সুদীপ রায়: মূলত রেসপিরেটরি সিস্টেম বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমেই এর সংক্রমণ ঘটে।ধরা যাক কেউ এই নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এবার তিনি না বুঝেই আপনার সামনে হেঁচে বা কেশে দিলেন। এবার হাওয়ায় মিশে নিশ্বাসের সাথে তা আপনার শরীরে প্রবেশ করল। আপনিও আক্রান্ত হয়ে গেলেন। মোটামুটি আক্রান্ত ব্যক্তির তিন ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকলে আপনিও এভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
একই ভাবে হাত দিয়ে মুখ চেপে কেশে সেই হাত যদি আপনি না ধুয়ে অন্য কোথাও দেন, আর পরে সেখানে অন্য কেউ হাত দেয়, তার দেহেও চলে যেতে পারে এই ভাইরাস।
প্রশ্ন: সে কারণেই কী এই ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে?
ডক্টর সুদীপ রায়: হ্যাঁ। এই আক্রান্তদের অবশ্যই চিহ্নিত করে আলাদা রাখা প্রয়োজন। নইলে এই ভাইরাস এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়াবে। চিকিৎসক, নার্সদেরও তাই এই ক্ষেত্রে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পড়ে কাজ করতে হয়।
প্রশ্ন: কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে?
ডক্টর সুদীপ রায়: লক্ষণ অনেক রকম হতে পারে। জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট।
প্রশ্ন: কিন্তু সাধারণ জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে তো অনেকেই হাসপাতাল যান না, বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। সেক্ষেত্রে কী হবে?
ডক্টর সুদীপ রায়: যদি কোনও এলাকায় এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়ায় তাহলে এই সব সাধারণ লক্ষণ থাকলেও সতর্কতা হিসেবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তারাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে বুঝতে পারবেন যে সেটি সাধারণ কোনও ফ্লু, ভাইরাস না কি অন্যকিছু। তবে যাদের হাঁপানি বা অ্যাস্থমা বা শ্বাসকষ্ট থাকে তাদের সাধারণত জ্বরের জন্য শ্বাসকষ্ট হয় না। তাই জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: এই ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক নেই?
ডক্টর সুদীপ রায়: না। এই ভাইরাসের সেরকম কোনও প্রতিষেধক নেই। বিভিন্ন লক্ষণ দেখে সেই অনুযায়ী আপাতত চিকিৎসা করা হচ্ছে। জ্বর হলে তা তিন চার দিনের মধ্যে ওষুধ খেয়ে কমে যেতে পারে, আবার বাড়াবাড়ি হলে অক্সিজেন দিতে হতে পারে বা ভেন্টিলেটরেরও প্রয়োজন হতে পারে।কেউ ৫ দিনেও সুস্থ হয়ে যেতে পারেন, কারুর এক মাসও লেগে যেতে পারে।
প্রশ্ন: যেহেতু এর কোনও প্রতিষেধক এখনও নেই, তাই কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির কী করা উচিত?
ডক্টর সুদীপ রায়: বেশি করে জল খাওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলাদা থাকা উচিত অন্যদের থেকে, যাতে না ছড়ায়। বিশ্রাম খুব দরকার।
(বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এই নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে যে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে সেখানে বলা হয়েছে শুধুমাত্র রক্ত পরীক্ষায় এই ভাইরাস ধরা নাও পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে রক্ত, মূত্র, নিশ্বাস প্রশ্বাসের পরীক্ষা, থুতু, কফের একাধিক স্যাম্পেলের পরীক্ষা করা প্রয়োজন।)
Comments are closed.