মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। যদিও বিধায়ক রয়েছেন, কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী কী করবেন তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রাজনৈতিক মহলে। মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে শুক্রবারই ঘনিষ্ঠমহলে শুভেন্দু জানিয়েছেন, আপাতত বিধায়ক হিসেবে তৃণমূলে থাকতে চান তিনি। কিন্তু তাঁর ইস্তফার পরই যে প্রশ্ন অনিবার্যভাবে উঠে আসছে তৃণমূলের অন্দরমহলে, তা হল এই পরিস্থিতিতে কী করবেন শুভেন্দুর বাড়ির দুই সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী?
তাঁরা কি শুভেন্দুর পথ ধরবেন, নাকি পিতা-পুত্র শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী থেকে যাবেন নেত্রীর সঙ্গেই, এখন এই নিয়েই জল্পনা আকাশ ছোঁয়া। সূত্রের খবর, অধিকারী পরিবারের কাঁথির বাড়ি শান্তিকুঞ্জের দিকে নজর রাখছেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জিও।
শুক্রবার দুপুর ১ টা নাগাদ মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় এক দিন। এই গোটা সময়ে শিশির অধিকারীর তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেবল শোনা গিয়েছে, শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী শুভেন্দুর সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত বলে দাবি করেছেন এবং তাঁরা মমতার সঙ্গেই আছেন বলে জানিয়েছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের বনিবনা না হওয়ার শুরুটা আজকের নয়। গত কয়েক মাস ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল শুভেন্দুর। সাম্প্রতিক অতীতে শুভেন্দু অধিকারীকে তৃণমূল এবং মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠক বা অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। ফলে দলের সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে ফিসফাস চলছিলই। তিনি বিজেপিতে যেতে পারেন বলেও জল্পনা চলছিল। স্বভাবতই তা নিয়ে আলোচনাও জারি ছিল। এবার ক্রমেই যখন সেই সব জল্পনা সত্যি হওয়ার পথে তখন শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারীর আগামী পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে জল্পনা জন্ম নিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অধিকারী পরিবার বরাবর সামনের সারিতে। জেলার দুই লোকসভা আসন কাঁথি এবং তমলুকের সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর এক ভাই কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শুভেন্দু যদি রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেন, তখন তাঁর বাবা, ভাইরা কী করবেন তা নিয়ে জেলা তৃণমূলের মধ্যে তীব্র বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এর আগে তৃণমূলের ভোটে কৌশলী প্রশান্ত কিশোর কাঁথির অধিকারী বাড়িতে গিয়ে শিশিরের সঙ্গে কথা বললেও, শুভেন্দুর দেখা পাননি। জানা যাচ্ছে, প্রবীণ নেতা শিশির অধিকারীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে মমতা ব্যানার্জির। অন্যদিকে শুক্রবার দিব্যেন্দুও জানিয়েছেন, তিনি দাদার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের সঙ্গে নিজেকে মেলাচ্ছেন না। তবে প্রকাশ্যে এখনও কিছুই স্পষ্ট করেননি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ এতে মুকুল-শুভ্রাংশু ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। যেখানে মুকুল বিজেপিতে যোগ দিলেও শুরুতেই বাবার পথে যাননি ছেলে শুভাংশু। শিশির-দিব্যেন্দুও কি তাই করবেন? নাকি অধিকারী বাড়ির মধ্যেই জমে উঠবে রাজনৈতিক লড়াই, যেখানে শুভেন্দু অধিকারীকে মোকাবিলা করতে হবে তাঁরই বাবা ও ভাইদের, সেটাই এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন।
Comments are closed.