রাশিয়ানদের মধ্যে স্ট্যালিনের অবদান এবং গ্রহণযোগ্যতা পৌঁছোল সর্বকালীন উচ্চতায়, সমীক্ষায় প্রকাশ

চূড়ান্ত একনায়ক, নাকি অসাধারণ নেতা, জোসেফ স্ট্যালিনকে আজ কীভাবে মনে রেখেছে বিপ্লবের দেশ রাশিয়া? আমেরিকা-ইউরোপ সহ প্রথম বিশ্বের দেশগুলির স্ট্যালিন-মূল্যায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে, কিন্তু খোদ রাশিয়ার বাসিন্দারা কী ভাবছেন জোসেফ স্ট্যালিনকে নিয়ে? মঙ্গলবার মস্কোর লেভাদা সেন্টার একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে জোসেফ স্ট্যালিনকে নিয়ে আমূল বদল এসেছে রাশিয়াবাসীর মূল্যায়নে। যা ছাপিয়ে গিয়েছে সর্বকালীন রেকর্ড।
লেভাদা সেন্টারের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, শতকরা ৭০ শতাংশ রুশ মনে করছেন, রাশিয়ার ইতিহাসে স্ট্যালিনের অবদান অনস্বীকার্য। ২০১৬ সালের সমীক্ষাতে যা ছিল ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে, মাত্র ১৯ শতাংশ মানুষ এখনও স্ট্যালিনের কর্মপদ্ধতিকে মেনে নিতে পারেননি। ২০১৬ সালে একই সংস্থার করা সমীক্ষায় এই সংখ্যাটি ছিল ৩২ শতাংশ।
ইদানিং রাশিয়ায় জোসেফ স্ট্যালিনকে নতুন করে মূল্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাস্তবের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকলেও, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে তাঁকে একজন চূড়ান্ত নিষ্ঠুর একনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার মানুষ এখন তাঁকে একজন অসাধারণ নেতা হিসেবেই দেখতে চাইছেন। এমনটাই মনে করেন, মস্কোর তরুণ গবেষক লিয়নটি বাইজ়োভ।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মানুষের সিংহভাগ মনে করেন, ঝড়ের গতিতে শিল্পায়নের পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্ট্যালিনের ভূমিকা এবং শেষে যুদ্ধ জয়, রাশিয়াকে উৎকর্ষের চরম সীমায় নিয়ে গিয়েছিল। ৩১ বছর দেশ চালানোর পর ১৯৫৩ সালে মৃত্যু হয় জোসেফ স্ট্যালিনের।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া রাশিয়ানদের মধ্যে ৫১ শতাংশ মনে করেন, একজন মানুষ হিসেবে স্ট্যালিন ভালো ছিলেন, ৪১ শতাংশ বলছেন, তাঁরা স্ট্যালিনকে সম্মান করেন, ৬ শতাংশ মানুষ স্ট্যালিনের প্রতি সমব্যথী এবং ৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা স্ট্যালিনকে ভালোবাসেন। সম্মিলিতভাবে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা জোসেফ স্ট্যালিনকে অপছন্দ, ভয় বা ঘৃণা করেন। ২৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা সোভিয়েত নেতাকে নিয়ে ভালো কিংবা মন্দ, কিছুই বলবেন না। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, স্ট্যালিনকে নিয়ে মত বদলে সায় দিয়েছে প্রায় সবকটি বয়স সীমার মানুষই। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত ১৮-২৪ বছর বয়সীরা স্ট্যালিনকে নিয়ে বিরুদ্ধ মত জানিয়েছিলেন। লেভাদা সেন্টারের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই বয়সসীমার ছেলে-মেয়েরাও জোসেফ স্ট্যালিনকে নিয়ে বাকিদের মতোই ভাবছেন।
লেভাদা সেন্টারের সমাজতাত্ত্বিক কারিনা পিপিয়ার মতে, সময়ের সাথে সাথে সোভিয়েত রাশিয়ায় স্ট্যালিনকে নিয়ে মূলত তিন ধরনের মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। স্ট্যালিন ভালো ছিলেন কিংবা খারাপ ছিলেন, এই একমাত্রিক মনোভাব রাজত্ব করেছে ২০০০ সাল অবধি। তারপরই আস্তে আস্তে মূল্যায়নে বদল আসতে থাকে রুশদের। ২০০৮-২০১৪ সালের মধ্যে স্ট্যালিন সম্পর্কে মনোভাব আরও খানিকটা বদলে যায়। এই সময় স্ট্যালিনকে ভালো কিংবা খারাপের মতো একমাত্রিক নয় বরং বহুমাত্রিক বিশ্লেষণের জোয়ার আসে দেশে, বলছেন কারিনা পিপিয়া। ২০১৫ সাল নাগাদ স্ট্যালিনকে নিয়ে নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের ফলাফলগুলো প্রকাশ্যে আসতে আরম্ভ করে। যা বিশ্লেষণ করে স্ট্যালিন সম্পর্কে দেশবাসীর পরিবর্তিত মনোভাবের একটি আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। লেভাদা সেন্টার মার্চ মাসের ২১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ১৬০০ জনের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষাটি চালিয়েছে।

Comments are closed.