কে এই ম্যারাথন রানার, ইন্ডিগো পাইলট রোহিত মাটেটি, যিনি কুণাল কামরার পাশে দাঁড়িয়ে চিঠি দিলেন কর্তৃপক্ষকে

রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামী ও স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান কুণাল কামরার বিমান কাণ্ডে উত্তাল নেট দুনিয়া। এই ঘটনায় ইন্ডিগো বিমান সংস্থা কুণালের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর একের পর এক বিমান সংস্থা এই কমেডিয়ানকে ‘ব্যান’ করতে শুরু করে, যা নিয়ে চলছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, এভাবে কি কোনও তদন্ত ছাড়াই কারও বিমান যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়?
এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন রোহিত মাটেটি কুণালের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন, কোনও আলোচনা ছাড়া শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টের উপর নির্ভর করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এ নিয়ে ইন্ডিগো বিমান কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেন তিনি, যা বিমান সংস্থাগুলির এই নির্দেশিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এরপরই ইন্ডিগোর পাইলটকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং রাজনৈতিক মহলে। কে এই রোহিত মাটেটি?


রোহিতের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পোস্ট থেকে ধারণা করা হচ্ছে, খেলাধুলোয় প্রবল উৎসাহী ও পারদর্শী রোহিত মাটেটি। পেশাগত জীবনে পাইলট ক্যাপ্টেন রোহিতের দৌড়বিদ হিসেবে বিশেষ সুনাম রয়েছে। দৌড়োন ম্যারাথন। তেমনই সমানতালে স্কুবা ডাইভিংও করেন তিনি।
তামিলনাড়ুর উটির লরেন্স স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন মাটেটি। ২০১১ সালে ট্রেনি হিসেবে রোহিত মাটেটি যোগ দেন স্পাইস জেট বিমান সংস্থায়। এরপর এই সংস্থার ফার্স্ট অফিসার হিসেবে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মুম্বইতে কর্মরত ছিলেন তিনি। ওই বছরের শেষ দিকে সিনিয়র ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সুযোগ পান ইন্ডিগো বিমান সংস্থায়। ২০১৮ সালের পর থেকে ইন্ডিগোর ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন ডাকাবুকো, পেশাগত জীবনেও বরাবর অকুতোভয় পাইলট ক্যাপ্টেন রোহিত মাটেটি।
অর্ণব গোস্বামী ও কুণাল কামরার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর রাতারাতি স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানের উপর ছ’ মাসের নিষেধাজ্ঞা চাপায় ইন্ডিগো। বিমান সংস্থার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে যায় ‘বয়কট ইন্ডিগো’ ট্রেন্ড। বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে থাকা রোহিত মাটেটিও কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। সংস্থাকে পাঠানো ই-মেলে তিনি জানান, কুণাল কামরা কাণ্ডে রিপোর্ট করার মতো কোনও বিষয় তিনি খুঁজে পাননি। ওইদিন বিমানে কুণালের ব্যবহার অপ্রীতিকর ঠেকলেও বিশৃঙ্খলার কারণে যাত্রীদের বিরুদ্ধে যে লেভেল ওয়ান অভিযোগ দায়ের হয়, তা কুণাল কামরার ব্যবহারে পাওয়া যায়নি বলে সংস্থাকে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, সিভিল অ্যাভিয়েশন আইন অনুযায়ী, কোনও যাত্রীর মৌখিক বা ইঙ্গিতপূর্ণ অসংযত ব্যবহার, কিংবা মত্ত অবস্থায় থাকলে লেভেল ওয়ানের অভিযোগ আনা হয়। এরপর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে তদন্তের পর সেই যাত্রীর জরিমানা ধার্য হয়। এবং সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। কিন্তু কুণালের ক্ষেত্রে তদন্তের আগেই ছ’মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় ইন্ডিগো।
কর্তৃপক্ষকে পাঠানো দীর্ঘ মেলে পাইলট মাটেটি লিখেছেন, যে মুহূর্তে কুণাল কামরা ও অর্ণব গোস্বামীর মধ্যে গণ্ডগোলের খবর পান, তিনি দেখেন, অভিযুক্ত কুণাল কিছু অঙ্গভঙ্গি করছেন, কিন্তু অর্ণব কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। পিএ সিস্টেমের মাধ্যমে তিনি কুণালকে তাঁর আসনে ফিরে যেতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে নিজের সিটে ফিরে যান কুণাল কামরা। তাঁকে রেড ওয়ার্নিং কার্ড দেখানোর প্রয়োজন হয়নি। তাই এক্ষেত্রে রিপোর্ট করার কথাও ভাবা হয়নি। মেলের শেষের অংশে মাটেটি লিখেছেন, তিনি মর্মাহত যে, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের উপর ভিত্তি করে পাইলটের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কুণালের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এইরকম ঘটনা তাঁর ন’বছরের পেশাগত জীবনে ‘অভূতপূর্ব’ বলে বর্ণনা করেছেন ওই পাইলট। তিনি এও প্রশ্ন তুলেছেন, হাইপ্রোফাইল কেসের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনও ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে কি না। যদি তা থেকে থাকে তা পরিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। যেহেতু এই ঘটনা বেশ কিছু আইনি অস্পষ্টতার জায়গা তৈরি করেছে বলে চিঠিতে দাবি করেন পাইলট ক্যাপ্টেন রোহিত মাটেটি।

Comments are closed.