১ মাসে অ্যাকটিভ কেস বৃদ্ধি প্রায় ২০০০%! ভোটের বাংলায় করোনা-বিস্ফোরণ

করোনা পরিস্থিতিতে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ কলকাতা হাইকোর্টের

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল দেশ। দেশে প্রতি সেকেন্ডে সংক্রমিত হচ্ছেন ৪ জন মানুষ। একাধিক রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। বহু জায়গায় চালু করতে হয়েছে নাইট কার্ফু। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে বাংলায় ৮ দফায় ভোট চলছে।

বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতিতে বাংলায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, কমিশনের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও তা তারা ব্যবহার করছে না। কেবল সার্কুলার দিয়েই দায় সারছে তারা।

যদিও বিজেপি আগেই দাবি করেছে, ভোটের সঙ্গে সংক্রমণ বৃদ্ধির কোনও যোগ নেই। সত্যি কি তাই? আসুন দেখা যাক পরিসংখ্যান কী বলছে?

প্রথম দফায় ২৭ মার্চ ও দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল পুরুলিয়ায় ভোট ছিল। ধরে নেওয়া যাক, ২৭ মার্চ ভোটের আগে অন্তত ১৫ দিন রাজনৈতিক দলগুলি পুরোদমে প্রচার করেছে। হয়েছে মিটিং, মিছিল, জনসভা। সেক্ষেত্রে সরকারি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে,

 

পুরুলিয়া
গত ১২ মার্চ পুরুলিয়ায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল ৩৮। ভোট গ্রহণের দিন ২৭ মার্চ, অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ আর ভোটের দু’দিন পর ১০৫। অর্থাৎ ১২ মার্চ থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত পুরুলিয়াতে অ্যাকটিভ রোগী বেড়েছে ২৩৪% এবং ভোটের দু’দিন পর তা গিয়ে ঠেকে ২৭৬% এ। যেদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ৎসনার শিকার হল কমিশন, তার ঠিক দু’দিন আগে অর্থাৎ ২০ এপ্রিল পুরুলিয়াতে অ্যাক্টিভ করোনা রোগী ১,৪৪০। শতাংশের হিসেবে ৩৭৮৯% বেড়েছে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা।

 

হাওড়া
হাওড়া জেলায় ভোট হয় চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল। ভোটগ্রহণের দিন হাওড়ায় অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ছিল ১,৬৩৯। ভোটের দিন থেকে ১৫ দিন পিছিয়ে গেলে কিন্তু সংখ্যাটা ততটা চিন্তার ছিল না। ২৫ মার্চ রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ২৫৯। অর্থাৎ ৬৩২% বৃদ্ধি।
২০ এপ্রিল হাওড়ায় অ্যাকটিভ কেস বেড়ে হয়েছে ৩,৩৯০। ২৫ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল, মাত্র ২৫ দিনে হাওড়ায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বেড়েছে ১৩০৮%।

 

পূর্ব মেদিনীপুর
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চিত্রটিও পুরুলিয়ার মতোই ভয়াবহ। ভোট প্রচারের শুরুতে ১২ মার্চ পূর্ব মেদিনীপুরে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ছিল ৪৮। ২৭ মার্চ ভোটের দিন তা হয় ৫৫। অর্থাৎ ১১৪% বৃদ্ধি।
২০ এপ্রিল অ্যাকটিভ কেস ২১ গুণ বেড়ে হয় ১,১১০। অঙ্কের হিসেবে ৩৯ দিনে অ্যাকটিভ কেসের বৃদ্ধি ২৩১২%।

 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিনটে দফায় ভোট হয়। ১, ৬ এবং ১০ এপ্রিল। ভোটের দু’দিন আগে ২৯ মার্চ ওই জেলায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল ২৩৮। এক মাসের মধ্যে (২০ এপ্রিল) সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১৫৮। অর্থাৎ অ্যাকটিভ কেসের বৃদ্ধি ১৩২৬%।

 

উত্তর ২৪ পরগনা
ঘন বসতি পূর্ণ আরেকটি জেলা উত্তর ২৪ পরগনা। এখানে ১০ এপ্রিল অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল ৪,৭০৮ জন। ঠিক তার ১০ দিন পরে তিনগুন বেড়ে ২০ এপ্রিল দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ১২ হাজার ৪০৭ জন। এখানে ২৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা। ২২ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে কম ৩৪২০। অর্থাৎ ৩৬২% বৃদ্ধি।

 

কলকাতা
খারাপ অবস্থা কলকাতার। ২০ এপ্রিল, বুধবার কলকাতায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ১৫,৭৯২। ঠিক ১ মাস আগে ২০ মার্চ কলকাতায় অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ছিল ১,৩৩৬। অর্থাৎ রাজ্যের রাজধানীতে ১ মাসের মধ্যে অ্যাকটিভ কেস বেড়েছে ১,১৮২%।

সরকারের দেওয়া এই হিসেব থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের সঙ্গে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্পর্ক গভীর। স্বাভাবিক ভাবে রাজ্যের ক্ষেত্রেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত ২১ মার্চ রাজ্যে যেখানে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫০৪ সেখানে ১ মাসের মধ্যে তা গিয়ে পৌঁছেছে ৬৩,৪৯৬ এ। অর্থাৎ ১,৮১২% বৃদ্ধি।

Comments are closed.