৫ বছরে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ কমেছে ৮ শতাংশ, ভারতে মহিলারা দিনে বাড়ির কাজ করেন ৩৫২ মিনিট, পুরুষদের তুলনায় ৫৭৭% বেশি
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে ভারতের অর্থনীতি। কেন্দ্রের শাসক দাবি করছে, আর মাত্র কয়েক বছরের অপেক্ষা, তারপরই উন্নয়নশীল তকমা ঝেড়ে ফেলে আমেরিকা, চিন, ফ্রান্সের মত পুরোদস্তুর উন্নত অর্থনীতির মর্যাদা পাবে ভারত। কিন্তু অর্থনীতির অন্যতম উপাদান, কর্মক্ষেত্রে পুরুষ-নারী অনুপাতের হারে ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত।
কর্মক্ষেত্রে মহিলা অংশগ্রহণের হারে (ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট বা এফএলএফপিআর) বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির সাপেক্ষে একেবারে নীচের দিকে রয়েছে ভারত। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সাম্প্রতিককালে এ দেশে কর্মক্ষেত্রে মহিলা অংশগ্রহণ ক্রমেই কমছে। ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট বা এফএলএফপিআর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে ২০১১-১২ সালে মহিলাদের অংশগ্রহণ যেখানে ছিল ৩১.২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে সেই সংখ্যা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে হয়েছে ২৩.৩ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা কমেছে ১১ শতাংশেরও বেশি।
কিন্তু উন্নত বিশ্বের অর্থনীতিতে যেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে ভারতে এই অবস্থা কেন?
২০১৮ সালের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কেয়ার ইকনমি বার্ডেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি অথবা সমাজভিত্তিক কাজে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট বা এফএলএফপিআরের সবচেয়ে বড় শর্ত হিসেবে উঠে এসেছে। অর্থাৎ, সামাজিক শ্রমের ক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তার অন্যতম কারণ, গৃহস্থালি কিংবা বিনা মজুরির কাজে তাদের বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ ভারতে মহিলা শ্রমিকের যোগান কমছে পাল্লা দিয়ে। পাশাপাশি, আরও কতগুলি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে গত বছরের রিপোর্টে। নারী শ্রমিকের অন্তর্ভুক্তি কমার পিছনে রিপোর্টে দায়ী করা হয়েছে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিধি-নিষেধকে। পাশাপাশি, ইদানিং ছোট পরিবারের চল হওয়ায়, তাও গ্রামীণ মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। সর্বোপরি, গৃহস্থালির কাজ, যেখানে মহিলারা কোনও ধরনের মজুরি পান না, তাতে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়ার ফলে গ্রামীণ ভারতে মহিলাদের মজুরির বিনিময়ে শ্রমদানের প্রবণতা ক্রমেই কমছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভপলমেন্টের (ওইসিডি) রিপোর্ট অনুযায়ী, সময় ব্যয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় মহিলারা (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) দিনে ৩৫২ মিনিট ব্যয় করেন গৃহস্থালির কাজে। যা পুরুষদের চেয়ে ৫৭৭ শতাংশ বেশি। পুরুষরা দিনে মাত্র ৫২ মিনিট, অর্থাৎ ১ ঘণ্টারও কম সময় ব্যয় করে বিনা মজুরির গৃহস্থালির কাজে। এই আকাশছোঁয়া বৈষম্যই মজুরি পাওয়া যায় এমন কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ কমাচ্ছে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। মজুরি দেওয়া হয় এমন কাজে নারী শক্তির অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে বলে ওইসিডি-র তরফে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি, শিশুকে দেখার এবং বাড়ির বয়স্কদের দেখভাল করার পরিকাঠামোও গ্রামীণ ভারতে কার্যত ধ্বংস হতে বসেছে বলে ওইসিডি-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলির দিকে দ্রুত নজর না দিলে গ্রামীণ ভারতে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি বাড়বে না বলেও দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ, বাড়ির কাজে ফুরসৎ না পাওয়ায় মহিলারা মজুরির বিনিময়ে কাজে যোগ দিতে পারছেন না, যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও।
Comments are closed.