চিনে ক্ষোভ বাড়ছে সেনা পরিবারের, গৃহযুদ্ধের ভয় পাচ্ছে সরকার! লিখলেন কমিউনিউস্ট নেতার ছেলে, ঘরে-বাইরে চাপে চিন
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে রক্ষক্ষয়ী হাতাহাতিতে হতাহত হয়েছে দুই পক্ষেরই সেনা। ভারতীয় সেনার ২০ জন আধিকারিক ও জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। রাজকীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু চিনা বাহিনীর হতাহতের কোনও সরকারি হিসেব আজ অবধি পাওয়া যায়নি। কূটনৈতিক মহলে চিনের তরফে বলা হয়েছে, শান্তির বার্তা দিতে ভারতকে পিএলএ এর হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। যাতে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা না বাড়ে। কিন্তু চিনের এই মতবাদই বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে গত কয়েকদিনে।
গালওয়ানের সংঘর্ষের কথা চিনের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। সরকার জানিয়েছে দু’পক্ষেরই হতাহত হয়েছে। এই অবস্থায় যে পরিবারের ছেলে পিএলএতে কাজ করেন, সেই বাড়ির উত্তেজনা সহজেই অনুমেয়। সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় ফেলে। ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। জানা যায়, পিএলএ পরিবারের সদস্যরা বাড়ির ছেলের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন মিলিটারি দফতরে। কিন্তু কোনও খোঁজ দেওয়া হয়নি। মেজাজ হারিয়ে দফতরের সামনেই বিক্ষোভ দেখান পিএলএতে কর্মরত সেনার পরিবারের সদস্যেরা। এই ভিডিওর জবাব দিতে কলম ধরতে হয় চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের এডিটরকে। তিনি লিখেছিলেন, যথা সময়ে সব জানানো হবে। কিন্তু শি জিনপিং সরকারের দক্ষিণ হস্ত গ্লোবাল টাইমসের খোদ এডিটর কলম ধরেও সেই ধিকিধিকি আগুনকে নেভাতে পারেননি। এবার শি জিনপিং সরকারকে কার্যত সশস্ত্র অভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারী দিয়ে কলম ধরলেন চিনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতার ছেলে তথা চিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিরোধী স্বর হিসেবে পরিচিত জিয়ানলি ইয়াং।
ওয়াশিংটন পোস্টে একটি ওপিনিয়ন লিখেছেন সিটিজেন পাওয়ার ইনিশিয়েটিভ ফর চায়নার প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রেসিডেন্ট জিয়ানলি ইয়াং। তিনি লিখেছেন, গালওয়ানে যে চিনের সেনা বেশি সংখ্যায় মারা গিয়েছে, তা স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছেন শি জিনপিং। তাঁর ভয়, এ কথা স্বীকার করলেই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। যা শেষ পর্যন্ত চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির শেকড় ধরেই টান লাগাবে।
বিশ্বব্যাপী সিসিপির ক্ষমতার একটি অন্যতম স্তম্ভ পিপলস লিবারেশন আর্মি। কিন্তু পিএলএ ক্যাডারদের যদি অবহেলা করা হয় এবং তাঁরা যদি ক্ষুব্ধ প্রাক্তন সেনা কর্মীদের সঙ্গে জোট বাঁধেন, শি জিনপিংয়ের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে, ওয়াশিংটন পোস্টে লিখছেন জিয়ানলি ইয়াং।
চাইনিজ ফরেন মিনিস্ট্রির মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বারবারই হতাহতের সংখ্যা জানাতে আপত্তি জানিয়েছেন। উল্টে বলেছেন, উত্তেজনা প্রশমনে জিনপিং সরকারের একটি সৌদার্যপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু এ কথা বলে ভারতকে জবাব দেওয়া গেলেও চিনের জনগণ আর তা মানতে চাইছেন না। ভারতে রাজকীয় মর্যাদায় মৃত জওয়ানদের শেষকৃত্যের ছবি সেই ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পিএলএর মধ্যে অশান্তি মাথাচাড়া দিতে পারে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের ওপিনিয়নে জানিয়েছেন জিয়ানলি ইয়াং। তাঁর বক্তব্য, সেনার ভিতরের ক্ষোভের সঙ্গে যদি বাইরে আন্দোলনরত প্রাক্তন সেনা কর্মীদের রাগকে মিলিয়ে দেওয়া যায়, সাধারণ মানুষও তাঁদেরই পক্ষে দাঁড়াবেন। সবচেয়ে বড় কথা, চিনের ঘরোয়া রাজনীতিতে বিপাকে পড়ে যাবেন অবিসংবাদী নেতা শি জিনপিং।
জিয়ানলি ইয়াং চিনের অভ্যন্তরীণ অশান্তির কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, বেজিং সহ গোটা দেশে রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন পিএলএর ৫৭ মিলিয়ন প্রাক্তন সেনাকর্মী। সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর অভিযোগ, দেশের প্রাক্তন সেনানী হিসেবে যে সম্মান ও মর্যাদার প্রত্যাশা করেন অবসরপ্রাপ্তরা, তা তাঁরা পান না। এই অভিযোগ বহু পুরনো। একইভাবে বর্তমান পিএলএ ক্যাডারদের মধ্যেও রয়েছে একাধিক বুনিয়াদি অসন্তোষ। যা গালওয়ান সংঘর্ষের পর নতুন করে পাকিয়ে উঠছে বেজিংয়ের আকাশে।
এই দুই অসন্তোষ মিলে যাতে তা গণ অসন্তোষের রূপ না নিতে পারে সেজন্য সচেষ্ট জিনপিং সরকার। অন্যদিকে ভারত যে চিনা পণ্য বয়কটের লাইন নিয়ে সরাসরি একাধিক জনপ্রিয় চিনা অ্যাপ রাতারাতি বাতিল করে দিয়েছে, তাও চিন্তায় ফেলেছে চিনকে। আমেরিকার ভারতপন্থী অবস্থানেও খানিকটা থমকে গিয়েছেন চিনের নেতৃত্ব। গালওয়ান নিয়ে এবার ঘরের মধ্যে থেকেও কঠিন আক্রমণের মুখে পড়তে চলেছেন শি জিনপিং, এমনটাই লিখেছেন জিয়ানলি ইয়াং।
Comments are closed.