দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির ঝাঁ চকচকে কেরিয়ার ছেড়ে রেপ ভিকটিমদের বিচারের জন্য লড়ছেন যোগীতা
১৪ বছর বয়স থেকেই নানান সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ড কার্যত তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির মোটা মাইনের চাকরি, বিলাসবহুল জীবনের মায়া ত্যাগ করে ধর্ষিতা নারীদের সু-বিচার পাইয়ে দিতে লড়াই করছেন। তিনি যোগীতা ভায়ানা। নারীর অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে এক পরিচিত নাম।
রাজধানীতিতেই জন্ম, বেড়ে ওঠা। যোগীতা গ্র্যাজুয়েশন করেছেন দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে। গুরু গোবিন্দ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা। যোগীতা জানান, ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে তিনি দুস্থ বাচ্চাদের পড়াতেন। ছোট থেকেই সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল যোগীতার। কিন্তু তাঁর ২২ বছর বয়েসে একটি রোড এক্সিডেন্ট তাঁকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে।
২০০২ সাল। চোখের সামনে একটি ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা দেখেন যোগীতা। আরও আশ্চর্য হন , আহত ব্যক্তিটি রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে দেখেও কেউ এগিয়ে আসছে না দেখে। থানা পুলিশের ঝামেলা এড়াতে পাস কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন পথ যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে যোগীতা এবং তাঁর এক বন্ধু আহত ব্যক্তিটিকে হাসপাতাল নিয়ে যান। যদিও তখন সময় পেরিয়ে গিয়েছে। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে আহত ব্যক্তির।
২২ বছরের যোগীতার জীবনে গভীর ভাবে ছাপ ফেলে ওই দৃশ্য। তাঁর কথায়, ওই সময় আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম দেশের আইন ব্যবস্থা দেখে। থানা পুলিশের ঝামেলা এড়াতে সরকারি হাসপাতালও ওই ব্যক্তিকে ভর্তি নিতে চায়নি। দেশের সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় সেদিন টের পেয়েছিলাম। যদিও হাল ছাড়েননি যোগীতা। এক্সিডেটের সাক্ষী হিসেবে কোর্টের দ্বারস্থ হয় তিনি। এবং মৃত ব্যক্তির স্ত্রী কন্যাদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করে আনেন।
যোগীতা বলেন, আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে ওই একটা ঘটনা আমায় তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। দেশের হাজারও মানুষের অসহায়তার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারতাম না। তখনই ঠিক করি পাকাপাকিভাবে কিছু করার। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির বিলাস বহুল চাকরিকে বিদায় জানান তিনি। তাঁর কথায়, চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত আমার জীবনের সব থেকে ভালো মুহূর্ত ছিল।
২০০৭ সালে দাস চ্যারিট্যাবেল ফাউন্ডেশন নামে যোগিতা একটি সমাজ সেবী সংগঠন তৈরী করেন। ‘দাস’ প্রধানত সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য কাজ করে। পাশাপাশি নারীদের সাবলম্বী করার জন্যই যোগীতার সংগঠন কাজ করছিল। এসবের মাঝেই ২০১১ সালে রাজধানীতে এক ২৩ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দেয়।
দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড কার্যত যোগীতার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দীর্ঘ ৯ বছর পর নির্ভয়ার পরিবার সুবিচার পান। এই পুরো সময় নির্ভয়ার পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন যোগীতা। দিনের পর দিন নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থেকেছেন। ধর্ণা-বিক্ষোভ থেকে শুরু করে আদালত সব জায়গায় গিয়েছেন।
যোগীতা জানান, নির্ভয়ার ঘটনা নিয়ে আমরা যখন লড়াই করছি, তখনও আমাদের কাছে আট থেকে ৯ টি এরকম ঘটনা ছিল। নির্ভয়ার ঘটনা প্রচার পাওয়া সত্ত্বেও তাঁর পরিবারকে সুবিচার পেতে ৯ বছর অপেক্ষা করতে হল। তারপরেই যোগীতার চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, এরকম অনেক ধর্ষিতা নারী আছেন যাঁরা ১৫ পরেও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বর্তমানে যোগীতা PARI( People Against Rape in India) নামে একটি সংগঠন চালান। যার প্রধান কাজ রেপ ভিকটিমদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা, নির্যাতিতাদের সুবিচারের জন্য লড়াই। পারী এই মুহূর্তে একশোরও অধিক ধর্ষিতা নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
Comments are closed.