একদিকে উন্নাও তো অন্যদিকে কাঠুয়া। নৃশংস সব ঘটনায় দূনিয়ার কাছে আজ মাথা হেঁট ভারতবর্ষের। কাঠুয়ার আট বছরের শিশু থেকে মুক্তচিন্তার শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আজ আক্রান্ত। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আক্রমণকারীর ভূমিকায় হয় দিল্লির শাসক দলের নেতা, নয়তো তাদেরই কোনও কট্টর কর্মী-সমর্থক। সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যবাদ আজ দেশের সামাজিক বিন্যাসটাকেই পালটে দিতে বসেছে। গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম আজ ভারতবর্ষের কড়া নিন্দায়। এই সময় দাঁড়িয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ, ব্যক্তিগত পরিসরে তীব্র ক্রোধ প্রকাশ, মোমবাতি মিছিল কিংবা রাস্তায় নেমে মানুষের চেতনা ফেরানোর ডাক দেওয়ার পাশাপাশি আপনি যদি ভাবেন, একবার খোঁজ নিয়ে দেখবেন, এই পরিস্থিতিতে কী করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তবে কি আপনাকে দেশদ্রোহী বলা হবে?
কাঠুয়ার ভয়াবহ ঘটনার পর দেশের সংবেদনশীল সমাজের চোখের জল আজ শুকিয়ে গেছে। এই অবস্থায়, আপনি সাধারণ মানুষ, অত বড় বড় লোকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই। ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল খুলে সার্চ করলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (nhrc.nic.in) নিজস্ব ওয়েবসাইট। এবং ওয়েবসাইট চালু হলেই আপনাকে আর কাঠুয়া কিংবা উন্নাওয়ের ঘটনা কষ্ট করে খুঁজতে হবে না। আপনার চোখ আটকে যাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক স্ক্রিনজোড়া বিজ্ঞাপনে। সেই বিজ্ঞাপনে লেখা রয়েছে, ‘nhrc invites all to take online human rights pledge to participate in competitions for logo designing, tagline/slogan, painting.’ যাঁরা ভাল লোগো, ডিজাইন, ছবি কিংবা স্লোগান পাঠাবেন তাঁদের জন্য অর্থ পুরস্কারও আছে। আপনি সংবেদনশীল মানুষ। খোঁজ করতে চাইছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। দেখতে চাইছিলেন, জম্মু-কাশ্মীর সরকারের কারও বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল। আর দেখলেন কমিশন আপনার কাছে মানবাধিকার রক্ষার বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য লোগোর ডিজাইন চেয়েছে। স্লোগান চেয়েছে। ছবি চেয়েছে।
আপনার তো চোখের জল শুকিয়ে তখন ক্রোধের আগুন জ্বলছে। প্রতিশোধ নিতে হাত নিশপিশ করছে। ভাবছেন এটাই মানব সভ্যতা! সেই সময় আচমকা মানবাধিকার কমিশনের লোগো ডিজাইনের আইডিয়া দেখলেন আপনি। তারপর দু’হাত জোড় করে মনে মনে একবার বললেন, ক্ষমা করো কাঠুয়ার আট বছরের বাচ্চা মেয়ে। তুমি তো জেনে গেলে না, কেমন তোমার দেশ। কেমন তোমার দেশের মানুষের অধিকার, আর কেমনই বা তোমার দেশের মানবাধিকার কমিশন।
ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আরও একবার হয়তো আপনি ভাল করে তাকাবেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটের দিকে। কিন্তু, নাঃ। জাতীয় মানবাধিকারের মানচিত্রে কাঠুয়া নেই।