৫ ই অগাস্ট। রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপর কেটেছে ঠিক ১ মাস। কেমন আছে কাশ্মীর?
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ সেনা সমাবেশ করা হয়েছিল উপত্যকায়। যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্ধ করা হয়েছিল টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ। বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, বাজার। প্রথমে গৃহবন্দি তারপর গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রীকে। এখনও গৃহবন্দি জম্মু-কাশ্মীরের বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা, একই অবস্থা শ্রীনগরের মেয়রেরও। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ক্রমেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর। আর বিরোধীরা বলছেন, বন্দুকের দাপটে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে কাশ্মীরের মানুষকে।
এদিকে মঙ্গলবার দিল্লিতে কাশ্মীরের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধান, সদস্য এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সূত্রের খবর তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের মুখ থেকে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির কথা শুনে সন্তুষ্ট অমিত শাহ। তিনি প্রতিনিধিদের আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই কাশ্মীর থেকে অতিরিক্ত আধা সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করছে, অতিরিক্ত আধা সেনা প্রত্যাহার হলেই স্বাভাবিক জনজীবন ফিরবে কাশ্মীরে। তাই বাড়তি যে পরিমাণ আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের ব্যাপারে ভাবছে কেন্দ্র। তবে এবিষয়ে ভিন্ন মতও আছে। যদিও কাশ্মীর পরিস্থিতি একেবারে ঠিক দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে। এরই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরও স্বস্তির খবর হল, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পরীক্ষায় ঢেলে অংশ নিয়েছেন কাশ্মীরিরা। এখনও পর্যন্ত সেনায় ভর্তির পরীক্ষায় উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার যুবক অংশ নিয়েছেন। যাকে অত্যন্ত ইতিবাচক ইঙ্গিত বলেই ধরছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা। উপত্যকায় চালু করে দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার টেলিফোন। সরকারি অফিসে হাজিরার সংখ্যাও বাড়ছে। সবমিলিয়ে কাশ্মীর নিয়ে প্রাথমিক দুশ্চিন্তা কাটার পথে, এমনটাই মনে করছে কেন্দ্র।
এদিকে এর উল্টো মতও আছে। বুধবারই কাশ্মীরের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এক তরুণের। আসরার আহমেদ খান নামের ওই ১৮ বছর বয়সী তরুণ নিরাপত্তারক্ষীদের ছোঁড়া ছররার আঘাতেই মারা গিয়েছেন বলে দাবি পরিজনদের। অন্যদিকে আসরার আহমেদের ক্ষতচিহ্ন পেলেট গানের নয় বরং ভোঁতা কোনও বস্তুর, দাবি সেনা বাহিনীর। কিন্তু উপত্যকায় সরকারি হিসেবে প্রথম প্রাণহানিকে কেন্দ্র করে যাতে নতুন করে গণ্ডগোল না ছড়ায়, তা দেখতে নতুন করে আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, উপত্যকায় যে ২৬ হাজার টেলিফোন লাইন চালু হয়েছে, তার সবকটিই সরকারি অফিস এবং আধিকারিকদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কাশ্মীরের ১০ টি জেলাতে এখনও অচল মোবাইল। পরীক্ষামূলকভাবে অবশ্য হান্দোয়ারা এবং কুপওয়াড়াতে মোবাইল চালু হয়েছিল। একমাস কেটে গেলেও এখনও টেলিফোন বা ইন্টারনেট কাজ করছেন না উপত্যকার সংবাদমাধ্যমের দফতরে।
সব মিলিয়ে কেন্দ্রের দাবি এবং তার পাল্টা দাবি, একমাস কেটে গেলেও কাশ্মীর নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত।
Comments are closed.