লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পিপলস লিবারেশন আর্মির আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক ভারতীয় সেনাকর্মী। প্রত্যাঘাতে হতাহত হয়েছে চিনের সেনাও। জানা গিয়েছে, চিনের বাহিনী পেরেক বসানো রড নিয়ে পরিকল্পনামাফিক হামলা চালিয়েছিল। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল গলফ খেলার স্টিকও।
সূত্রের খবর, ১৫ জুন রাতে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ৬ ঘণ্টা মারামারি চলে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সেনা সীমান্তে লাঠি হাতে বা ঢিল মেরে মারামারি করল কেন?
উত্তরটা লুকিয়ে দুই দেশের মধ্যে হওয়া একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যে। ভারত-চিন, দু’পক্ষের কাছেই যে চুক্তি মেনে চলাটা সীমান্তের আনুষ্ঠানিক দস্তুর। সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ট্যুইট করে জানতে চেয়েছিলেন, লাদাখ সীমান্তে সেনা নিরস্ত্র কেন ছিল? তার জবাব দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রী রাহুলকে জবাব দিতে গিয়ে বলেন, জওয়ানরা অস্ত্র নিয়েই ডিউটি করছিল। ১৯৯৬ এবং ২০০৫ সালের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ফেস-অফের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যায় না।
বিদেশমন্ত্রী ভারত ও চিনের মাঝে হওয়া ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালের দুটি চুক্তির কথা বলেছেন। আসুন দেখা যাক কী সেই চুক্তি।
এই দুই চুক্তিতেই বেশ কিছু অলঙ্ঘ প্রোটোকলের কথা লেখা রয়েছে। যাতে যে কোনও অবস্থাতেও প্রাণহানি এড়ানো যায়। ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথমবার ভারত-চিনের মধ্যে চুক্তি হয়। ২০০৫ এর ১১ এপ্রিল যা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় চুক্তিবদ্ধ হয় দুই দেশ।
১৯৯৬ সালের চুক্তির ৬ নম্বর আর্টিকেলে বলা আছে,
ক. কোনও দেশই গুলি চালাবে না। কোনও দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা LAC র ২ কিলোমিটারের মধ্যে পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন, বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবহার, বিস্ফোরণ প্রক্রিয়া চালানো, বন্দুকবাজি বা বোমাবাজি করবে না। এই নিষেধ অবশ্য দৈনন্দিন অনুশীলনের স্বার্থে হালকা অস্ত্রের ফায়ারিং রেঞ্জের জন্য নয়।
খ. রাস্তা তৈরি বা অন্য কোনও উন্নয়নমূলক কাজের প্রয়োজনে যদি LAC এর ২ কিলোমিটারের ভিতরে বিস্ফোরক ব্যবহার করতে হয়, তাহলে যে দেশ এই কাজটি করবে, তাদের অন্য দেশকে কূটনৈতিক চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে জানাতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তে সেনা কর্তাদের রুটিন বৈঠকে কাজ করার অন্তত ৫ দিন আগে জানাতে হবে।
গ. যদি সীমান্তে পাহারারত সেনা কর্মীরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা কিংবা অন্য কিছু নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে উভয়পক্ষকেই আত্মসংযম করতে হবে। বিবাদের যাতে তীব্রতা বৃদ্ধি না হয়, তা নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার। দ্রুত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বার্তা শুরু করতে হবে। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
যদিও এখন অনেকেই বলছেন, সেই চুক্তি বিশেষ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে করা হয়নি। তাই বিশেষ পরিস্থিতিতে তা ভারতীয় সেনার ভাঙাই উচিত ছিল। বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে এই চুক্তি পরিমার্জনের কথা ভাবছে নয়াদিল্লি।
Comments are closed.