আদালতে সমকামিতার স্বীকৃতির আদায় আইনজীবী যুগলের কাছে এক ব্যক্তিগত জয়ও বটে

৩৭৭ ধারা অবলুপ্তি নিয়ে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নেপথ্যে ছিলেন দুই মহিলা আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী ও অরুন্ধতী কাটজু। শীর্ষ আদালতের সেই ঐতিহাসিক রায়ের পর এই আইনজীবী জুটিকে একডাকে চেনেছিল দেশ। যদিও এই জয়কে শুধুমাত্র পেশাগত জয় হিসেবে দেখতে নারাজ আইনজীবী গুরুস্বামী ও কাটজু। এক বেসরকারি টিভি চ্যানেল সাক্ষাৎকারে জানালেন, আদালতের সেদিনের রায় ছিল তাঁদের ব্যক্তিগত জয়ও। সেই সঙ্গে নিজেদের সমকামী যুগল হিসেবে অকপট স্বীকারোক্তি আইনজীবী গুরুস্বামী ও কাটজুর।
তাঁদের তৎপরতায় বদল এসেছে ১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো আইনে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাঁরা লড়াইয়ে নেমেছিলেন, সেই ৫ পিটিশনরের ২ জন ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী ও আইনজীবী অরুন্ধতী কাটজু। তাঁদের লড়াইয়ে প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সমকামিতা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি আমার মতো। শারীরিক সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা অযৌক্তিক, খামখেয়ালি ও অসাংবিধানিক’।
১৫৭ বছর পর সংশ্লিষ্ট আইনে বদল আনা হয়। একে একদিকে ঐতিহাসিক রায় যেমন বলা যায়, তেমনই একজন মানুষের মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী স্বাধীনতা। একজন ব্যক্তির যৌন আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় ও অধিকার, দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার কর্মীদের একটা বড় অংশের দাবিতে শিলমোহর পড়ে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সমকামিতার বৈধতা আদায়ের সেই লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন আইনজীবী অরুন্ধতী কাটজু ও আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী।
কিন্তু সেদিনের ঐতিহাসিক সুপ্রিম রায় তাঁদের কাছে ছিল ব্যক্তিগত জয়ও। সম্প্রতি এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে এমনই জানালেন সমকামী আইনজীবী জুটি অরন্ধতী কাটজু ও মেনকা গুরুস্বামী। সেই সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে নিজেদের ‘পার্টনার’ হিসেবে ঘোষণা করলেন তাঁরা। সাক্ষাৎকারে তাঁদের প্রশ্ন করা হয়, ২০১৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় কি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না? তাঁরা তো শুধু সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী ছিলেন না, ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল। এর উত্তরে আইনজীবী গুরুস্বামী ও কাটজু, দু’জনেরই স্বীকারোক্তি, সেদিনের রায় শুধু পেশাগত সাফল্য ছিল না, ব্যক্তিগত জয়ও বটে।
আইনজীবী গুরুস্বামী বলেন, সমকামিতা নিয়ে ২০১৩ সালের রায় শুধু আইনজীবী ও জনগণ হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত পরাজয় ছিল তাঁদের কাছে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারার পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ অতীতের সেই রায়কে নাকচ করে দেয়। ২০১৮ সালের শীর্ষ আদালতের রায় দীর্ঘ আন্দোলনেরই জয় বলে জানালেন আইনজীবী সমকামী যুগল।

Comments are closed.