২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়াকাণ্ডের পর পেরিয়ে গেছে ৯ বছর, কতটা বদলেছে চিত্র?

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাত। দিল্লিতে নির্মমতার শিকার হয়েছিলেন প্যারা মেডিক্যাল পড়ুয়া এক তরুণী। চলন্ত গাড়িতে বন্ধুর সামনেই কয়েকজন তাঁকে ধর্ষণ করার পর রাজপথে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। দীর্ঘ কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মারা যান নির্ভয়া। সেই ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর দিল্লির তিহার জেলে আসামি অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংহের ফাঁসি হয়। এই মামলায় মোট অপরাধী ছিল ৬ জন। বিচার চলাকালীন তিহাড় জেলেই আত্মহত্যা করে এক অপরাধী রাম সিংহ। নাবালক হওয়ায়, তিন বছর হোমে থেকেই সাজার মেয়াদ শেষ করে, ২০১৫ সালে মুক্তি মেলে আর এক অভিযুক্তের।

কিন্তু প্রশ্ন হল যে নির্ভয়াকাণ্ডে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন শয়ে শয়ে মানুষ। সেই ঘটনার ৯ বছর পর কতটা বদলেছে দেশের চিত্র? কতটা সুরক্ষিত দেশের মহিলারা ? বিপিআরডির সমীক্ষা অনুযায়ী, নির্ভয়া-কাণ্ডের পর বর্মা কমিশন প্রতি থানায় মহিলা পুলিশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। মহিলা নির্যাতনের যে কোনও ঘটনায় তাঁদেরই হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হয় সেখানে। কমিশনের মতে, মহিলা পুলিশের কাছে নির্যাতিতারা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন। এতে তদন্তেরই সুবিধা হবে। কমিশনের নির্দেশ মেনে এর পরেই ৩৩ শতাংশ ননগেজেটেড (কনস্টেবল থেকে সাব-ইনস্পেক্টর) পদে মহিলা পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে থানায় থানায়। কিন্তু, মহিলা পুলিশের সংখ্যা অপরাধের সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট কম। একনজরে দেখে নেব ২০১২ সালে নির্ভয়াকাণ্ডে পরও কোন কোন ধর্ষণের ঘটনা নাড়া দিয়েছে দেশকে।

২০১৩ সালের ৭ জুন বাংলার কামদুনিতে ২১ বছরের এক কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়। কলেজ থেকে ফিরে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল ছাত্রীটি। সেদিন হাল্কা বৃষ্টি পড়ছিল, তাই ভাইয়ের আসতে দেরি হচ্ছিল। নিজেই গ্রামের দিকে হেঁটে যায় তরুণী। মদ্যপ অবস্থায় ৯ জন তাঁকে গণধর্ষণ করে।

কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে যাচ্ছিলেন এক তরুণী৷ তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্যই পরিত্যক্ত শক্তি মিলের নিকটবর্তী পথ নেন তাঁরা৷ তখনই ওই তরুণীকে জোর করে মিলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এক দল যুবক৷

২০১৭ সালে উন্নাওয়ের এই ধর্ষণ-কাণ্ড আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছিল। নির্যাতিতা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। ঠিক তার পরের দিন অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয় নির্যাতিতার বাবাকে। জেলবন্দি অবস্থায় তাঁর ওপর চলে হামলা। জেলেই মৃত্যু হয় তাঁর। আদালতে শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়ার সময় পাঁচজন লোক জ্বালিয়ে দিয়েছিল উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডের শিকার মহিলাকে। জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েই অভিযুক্ত হামলা করেছিলেন মহিলার উপর। গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল অভিযুক্ত। সেই আগুনে দাউ দাউ শরীরটা নিয়ে ছুটেছিলেন এক কিলোমিটার। নিজেই অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

২০১৮ সালে কাঠুয়া কাণ্ড দেশকে নাড়া দিয়েছিল। ঘোড়া চরাতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কাশ্মীরের আট বছরেরে ফুটফুটে শিশু। চারদিন ধরে টানা মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়। চলে লাগাতার ধর্ষণ।

২০২০ সালে গণধর্ষণের শিকার ১৯ বছরের এক তরুণী। পৈশাচিক অত্যাচারের পর কয়েকদিন হাসপাতালে লড়াই করার পর মারা যান ওই তরুণী। পরিবারকে না জানিয়ে দেহ সৎকার করে পুলিশ।

Comments are closed.