শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারের শিকার মহিলা, বড় হয়ে মা’র দ্বিতীয় বিয়ে দিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলে, মর্মস্পর্শী পোস্টে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া

গোকুলের তখন মাত্র ১৫ বছর। মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে। মায়ের উপর অত্যাচার মাত্রা ছাড়াচ্ছিল। মাকে মারের হাত থেকে বাঁচাতেই বাড়ি ছেড়েছিল সে।
তারপর কেরলের কোল্লামের গোকুল শ্রীধরের জীবনে পেরিয়েছে বহু চাপানউতোর। বড় হয়েছে গোকুল, চাকরি পেয়েছে ভালো সংস্থায়। আর এই গোটা পথ গোকুলকে আগলে রেখেছেন তাঁর মা। যে মা দিনের পর দিন অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করেছেন শ্বশুরবাড়িতে, স্রেফ তাঁর সন্তানের মুখে দিকে তাকিয়ে। চাকরি পাওয়ার পর গোকুলের প্রথম কাজ সেই মাকে তাঁর হারানো জীবন ফিরিয়ে দেওয়া। মায়ের ফের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ছেলে। কিন্তু সমাজ কি মেনে নেবে? আত্মীয়রা কী বলবেন? এই প্রশ্নই তখন ঘুরছে ছেলে গোকুলের মাথায়। কিন্তু থামেননি গোকুল।
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয় গোকুলের একটি পোস্ট। মালয়ালি ভাষায় করা সেই পোস্টে গোকুল শ্রীধর যা লিখেছেন তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আম্মা এমন একজন মানুষ, যিনি চিরকাল অন্যের সুখের জন্য নিজেকে অবহেলা করে গিয়েছেন। আমার আম্মার বিয়ে একটি দুর্ঘটনা ছিল, যেখানে বছরের পর বছর ধরে মায়ের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। মনে পড়ছে, একদিন বাড়ি ফিরে দেখি মায়ের কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। মাকে আবার মারধর করা হয়েছে, এটা কাউকে বলে দিতে হয়নি। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন এত সহ্য কর? আম্মা আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, তোর জন্য’। মায়ের জন্য ছেলের আবেগ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ফেসবুকে তুফান তোলে গোকুলের পোস্ট। এক সপ্তাহের কম সময়ে পোস্টটি শেয়ার হয় ৪ হাজার ৬০০ টি এবং লাইক পড়ে ৪৩ হাজারেরও বেশি।
এই পোস্টের কমেন্ট বক্স গোকুলকে বুকে বল এনে দেয়। হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েন গোকুল আর তাঁর প্রিয় আম্মার পাশে। কিন্তু তখনও আসল কাজ বাকি। আম্মা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না, বলছেন গোকুল। কিন্তু আত্মীয় প্রতিবেশীরা সবাই মিলে আম্মাকে লাগাতার বোঝানোর পর কিছুটা নরম হন তিনি। এদিকে গোকুল খুঁজতে থাকেন মায়ের জন্য পছন্দের পাত্র। অবশেষে তা পাওয়া গেল। কেরলেই এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্নেল স্ত্রীকে হারিয়েছেন। সন্তান পাকাপাকিভাবে কেরলের বাইরে। নিঃসঙ্গতাই যখন ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিলেন রিটায়ার্ড কর্নেল কে ভেনু, তখনই তাঁর কাছে প্রস্তাব আসে গোকুলের। প্রস্তাব ফেরাননি অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক। এবার আসল কাজ গোকুলের আম্মাকে রাজি করানো। সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন মিনি আয়াপ্পা। ফের চার হাত এক হল।
মাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পেরে খুশিতে টইটম্বুর গোকুল শ্রীধর বলছেন, একটা ছোট পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দু’জনের বিয়ে হয়েছে। সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেই অভিনন্দনের বন্যা। মানুষের এমন সাড়া দেখে গোকুল বলছেন, কুসংস্কার কিংবা গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে ওঠার সময় এসেছে। আমার এই পদক্ষেপ, আরও অনেক গোকুলকে এই পথে ভাবতে সাহায্য করলেই আমি সফল, বলছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়র গোকুল শ্রীধর।

Comments are closed.