এবিপি-টাইমস অফ ইন্ডিয়া-দ্য হিন্দু, তিন সংবাদমাধ্যমে বন্ধ কেন্দ্রীয় সরকারি বিজ্ঞাপন, মোদী বিরোধিতার মাশুল? রিপোর্ট রয়টার্সের

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের কোপেই কি পড়ল দেশের তিনটি সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী? দ্য হিন্দু, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং এবিপি গোষ্ঠীর সংবাদপত্রে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। বিরোধীদের দাবি, সরকার বিরোধী খবর করারই মাশুল গুনতে হচ্ছে দেশের অগ্রগণ্য তিন মিডিয়া হাউসকে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের উপর খড়গহস্ত মোদী সরকার। অভিযোগ, সেই সময় থেকেই সরকারের কাজ নিয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকির মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা। কেউ খুন হয়েছেন, কারও চাকরি গিয়েছে আবার কোনও সংবাদমাধ্যমকে বিজ্ঞাপন না দিয়ে দুর্বল করার পথ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কখনওই এই অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি। সেই অভিযোগেরই পুনরাবৃত্তি হল বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর তিনটি বড় সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বন্ধে।
রয়টার্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এবিপি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং দ্য হিন্দু, এই তিনটি সংবাদপত্রের মিলিত পাঠক সংখ্যা আড়াই কোটিরও উপরে। লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ার শুরুটা অবশ্য মোদী সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার অনেক আগে থেকেই বলে তিনটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
দেশের সর্বাধিক প্রচারিত টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং দ্য ইকনমিক টাইমস সংবাদপত্রের প্রকাশনা সংস্থা বেনেট কোলম্যানের এক কর্তা অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিছু প্রতিবেদনে ওঁরা খুশি হননি বলেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিছুক ওই আধিকারিক। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্য টাইমস গোষ্ঠীর সামগ্রিক আয়ের ১৫ শতাংশই আসে সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে। মূলত, সরকারি কাজের টেন্ডার এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের খুঁটিনাটি প্রকাশিত হয় বিজ্ঞাপনে।
এবিপি গোষ্ঠী, যাঁদের ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ বরাবরই মোদীর তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিত। জাতীয় সুরক্ষা থেকে শুরু করে নোটবন্দি কিংবা বেকারত্ব, সব কিছুতেই মোদী সরকারের লাগাতার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য টেলিগ্রাফ। রয়টার্সে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, কলকাতার এবিপি গোষ্ঠীতেও কেন্দ্রীয় সরকারি বিজ্ঞাপন শুকিয়ে গিয়েছে। এই সংস্থারও শতকরা ১৫ শতাংশ আয় আসে সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে। গত ৬ মাস ধরে যা সম্পূর্ণ বন্ধ। রাতারাতি সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবিপি গোষ্ঠী বিকল্প পথের সন্ধানে বলে রয়টার্স সূত্রে খবর।
‘আপনার সম্পাদকীয় নীতি যদি সরকারের পছন্দমাফিক কাজ না করে সমালোচনার পথে যায়, তাহলে সরকারের তরফে আপনাকে শাস্তি দেওয়ার একটাই উপায়, তা হল বিজ্ঞাপন বন্ধ করা’। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে মনে করছেন এবিপি গোষ্ঠীর এক আধিকারিক।
রাফাল নিয়ে পরপর তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে দ্য হিন্দু গোষ্ঠীর সংবাদপত্রেও সরকারি বিজ্ঞাপনের দেখা নেই। যদিও সরকারি তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ।
বিজেপি নেতা নলিন কোহলি অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অভিযোগকে হাস্যকর বলে অভিহিত করে বলছেন, মোদী সরকারের আমলে প্রতিদিন সংবাদমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে খবর ছেপেছে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনওদিন তাতে হস্তক্ষেপ করেনি। বিজেপি প্রকৃত অর্থেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, দাবি নলিন কোহলির।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪০। তালিকায় আফগানিস্তান, মায়ানমার কিংবা ফিলিপিন্সের চেয়েও পিছিয়ে ভারত। ২০০২ সালে যখন এই সমীক্ষা শুরু হয়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিল ১৩৯ টি দেশ, সেই সময় ভারত ছিল ৮০ তম স্থানে।
গত সপ্তাহে সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, তিনটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীকে জোর করে বশংবদ করার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। গোটা ঘটনাটিকে অগণতান্ত্রিক বলে আক্রমণ করেছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, বিজ্ঞাপন বন্ধ করে সংবাদপত্র গোষ্ঠীগুলোকে সরকারের কাছে মাথা নত করার বার্তা দেওয়া হল।
তিনটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসাররা রয়টার্সের পাঠানো ইমেলের কোনও জবাব দেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Comments are closed.