কেরলের ইদুক্কির আদিবাসী অধ্যুষিত এক প্রত্যন্ত অঞ্চল ইদামালাকুড্ডি। সেখানেই নিজের ছোট্ট চায়ের দোকানে এক আস্ত লাইব্রেরি তৈরি করেছেন পি ভি চিন্নিথামবি।
জঙ্গলে ঢাকা ইদামালাকুড্ডিতে না আছে বিদ্যুৎ পরিষেবা, না আছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। রেডিও ছাড়া কোনও তথ্য জানা বা বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে চিন্নিথামবির এই লাইব্রেরি। আর তাঁকে সাহায্য করেন গ্রামেরই স্কুল শিক্ষক পি কে মুরলিধরণ।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এই লাইব্রেরির কথা উল্লেখ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, সবাই জানলে অবাক হবেন, কেরলের এক প্রত্যন্ত গ্রামের জঙ্গলের ভেতর একজন আস্ত লাইব্রেরি গড়েছেন।
সেটা ২০১২ সাল। চায়ের দোকানে আসা শিক্ষক পি কে মুরলিধরণের সঙ্গে গল্প করতে করতে চিন্নাথামবি জানিয়েছিলেন, তাঁর বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা। শুধু নিজে যে বই পড়তে ভালোবাসেন তাই নয়, জ্ঞানের আদান-প্রদানে বিশ্বাসী চা দোকানী চিন্নাথামবি। তাঁর লাইব্রেরি তৈরির পরিকল্পনার কথা শুনে প্রবল উৎসাহিত করেন শিক্ষক মুরলিধরণ। এভাবেই শুরু। চায়ের দোকানের একপাশে একটি মাদুরে ১৫০ টি বই সাজিয়ে তৈরি হয় চিন্নাথামবির লাইব্রেরি ‘অক্ষরা’।
ক্রমে বই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দেড় হাজার। মালায়ালম ও তামিল ভাষায় লেখা বইয়ে ভর্তি চায়ের দোকানে আছে ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুবাদ সাহিত্য, ছোটদের জন্য কমিকস বই। চিন্নাথামবির পাঠাগারে বেশ কিছু বই দান করেছেন শিক্ষক মুরলিধরণ নিজে। এছাড়া অনেকেই এখন বই দান করে সমৃদ্ধ করছেন চিন্নাথামবির লাইব্রেরিকে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী থেকে যুবক-যুবতীরা বই নিতে যান অক্ষরা লাইব্রেরিতে। তবে এই লাইব্রেরিতে কোনও ফি লাগে না। শর্ত একটাই। পড়া শেষে যেন বই ফেরত দেওয়া হয় ‘অক্ষরা’য়।
ইদামালাকুড্ডিই কেরলের প্রথম আদিবাসী অঞ্চল যাকে ২০১০ সালে পঞ্চায়েত ঘোষণা করে কেরল সরকার। যদিও বুনো হাতির তাণ্ডবে ২ হাজার ১২৬ জনসংখ্যা বিশিষ্ট এই পঞ্চায়েত এলাকা থেকে অনেকেই অন্যত্র উঠে যাচ্ছেন। কিন্তু চিন্নাথামবির লাইব্রেরির আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে বইপ্রেমীরা ছুটে যান ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র আঁচ না পড়া এই জঙ্গলমহলে। এখন বয়সজনিত অসুখের কারণে নিজে খুব একটা লাইব্রেরিতে বসতে পারেন না চিন্নাথামবি। বন্ধু মুরলিধরণ স্কুল সামলে সময় করে লাইব্রেরিটা চালাচ্ছেন। বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকায় স্কুলের একটা জায়গায়ও আর একটা লাইব্রেরি তৈরি করেছেন তিনি। আর বৃদ্ধ পি ভি চিন্নাথামবির ইচ্ছে, এভাবে জ্ঞানের আদান-প্রদান যেন জারি থাকে।
Comments are closed.