৬ বছরে ৩৫ টির বেশি সরকারি পরীক্ষায় ব্যর্থতার পর অবশেষে আইপিএস হলেন হরিয়ানার বিজয় বর্ধন, হাল না ছাড়া মনোভাবের বেনজির দৃষ্টান্ত
‘পার কি না পার কর যতন আবার
এক বারে না পারিলে দেখ শত বার।’
কালীপ্রসন্ন ঘোষের ‘পারিব না’ কবিতার এই লাইন দুটি যথার্থই খাটে হরিয়ানার হাইজারের বাসিন্দা বিজয় বর্ধনের ক্ষেত্রে। তবে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য একশোবার চেষ্টা করতে হয়নি আইপিএস বিজয় বর্ধনকে। গত ৬ বছরে ৩৫ টির বেশি সরকারি পরীক্ষায় ব্যর্থতা, আর ৫ বার ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর ২০১৮ সালে সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ১০৪ র্যাঙ্ক করলেন বিজয় বর্ধন। সাধারণ আর পাঁচটা সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলেও, শুধু হাল না ছাড়া মনোভার আর জেদের জোরে ৩৫ বারের ব্যর্থতার পর সাফল্য পেলেন একেবারের ইউপিএসসি’র মতো কঠিন পরীক্ষায়।
বিজয় বর্ধনের লড়াই শুরু হয় ২০১৩ সাল নাগাদ। আর পাঁচজন স্নাতকের মতো কলেজ পাশ করে তিনিও সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। হরিয়ানার হাইজার থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভের পর দিল্লি পাড়ি দেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে। দিল্লি যাওয়ার প্রধান লক্ষ্য ইউপিএসসি হলেও, অন্যান্য সরকারি চাকরিতেও যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে থাকেন। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইউপিএসসি, হরিয়ানা পিসিএস, পঞ্জাব পিসিএস, এসএসসি, সিজিএল, এলআইসি, আরবিআই গ্রেড বি-৩৫ টির বেশি সরকারি পরীক্ষা দেন বিজয় বর্ধন। হয় লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি, না হলে ইন্টারভিউতে গিয়ে অসফল হয়েছেন। কয়েকটা পরীক্ষাতে আবার মেডিকেল টেস্টে পাস করতে পারেননি। প্রতিবার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি। খুঁজেছেন কোথায় খুঁত ছিল। ৪ বার ইউপিএসসি, ৩০ টিরও বেশি বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েও কিন্তু হাল ছাড়েননি বিজয় বর্ধন। বরং চোয়াল শক্ত করে ২০১৮ সালে পঞ্চম বারের জন্য ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এবার সাফল্য এল। ২০১৮ সালের ইউপিএসসিতে ১০৪ র্যাঙ্ক করেন হরিয়ানার বিজয় বর্ধন। তাঁর কথায়, আইপিএস অফিসার হওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। যতবার অসফল হয়েছেন নতুন উদ্যমে আবার পড়াশোনা শুরু করেছেন।
বিজয় বর্ধনের ইউপিএসসিতে সাফল্য এসেছে পাঁচ বারের চেষ্টায়। ২০১৪ সালে প্রথমবার সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন বিজয় বর্ধন। কিন্তু প্রিলিমিনারিতেই আটকে যান। পরের বছর প্রিলিমিনারি পাশ করলেন বটে, আবার মেইন পরীক্ষা পাশ করতে পারলেন না। একই ফল হল ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও। হাল ছাড়েননি। ২০১৮ সালের ইউপিএসসির জন্য আরও বেশি পরিশ্রম শুরু করেন। এবার মেইন পার করলেন। ডাক এল ইন্টারভিউতে। সেই হার্ডলও পার করে দীর্ঘ ৫ বারের চেষ্টায় ইউপিএসসিতে সফল বিজয় বর্ধন। বিজয় বর্ধনের ইচ্ছে আইপিএস অফিসার হিসেবে দেশের সেবা করা।
ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি, এই প্রাচীন প্রবাদ আরও একবার সত্যি করলেন হরিয়ানার বিজয় বর্ধন।
Comments are closed.