গণপিটুনি ও ঘৃণার রাজনীতির শিকারদের পাশে ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’, চালু ২৪ ঘণ্টার টোল ফ্রি হেল্পলাইন

সারা দেশে গণপিটুনি এবং ঘৃণার রাজনীতি ক্রমবর্ধমান। কখনও বাংলা আবার কখনও ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিভিন্ন অছিলায় মুসলিম, দলিত, আদিবাসী কিংবা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের হামলার ঘটনা অব্যাহত। এর তীব্র সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন সহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু অভিযোগ, ঘৃণার রাজনীতি বা গণপিটুনির ঘটনা রুখতে কোনও পদক্ষেপই করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ভার রাজ্যের বলে কার্যত দায় এড়িয়ে যাচ্ছে মোদী সরকার। এই পরিস্থিতিতে গণপিটুনি কিংবা ঘৃণার রাজনীতির শিকার মানুষদের পাশে দাঁড়াতে তৈরি হল ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’ হেল্পলাইন।
সোমবার নয়া দিল্লির প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ায় আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’ হেল্প লাইন। দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে টোল ফ্রি ১৮০০-৩১৩৩-৬০০-০০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। হেল্প লাইনের পক্ষ থেকে অভিযোগকারীকে পুলিশি এবং আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে। এই সাংবাদিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে হাজির হয়েছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে, সিনিয়র সাংবাদিক উর্মিলেশ, গোরখপুরের ডাক্তার কাফিল খান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ প্রমুখ। দেশে সামাজিক ন্যায় ও শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেও অধ্যাপক অপূর্বানন্দের আক্ষেপ, দেশে স্রেফ ধর্ম বিশ্বাসের কারণে মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হামলা থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না দলিত, আদিবাসী মানুষরাও। থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না। এই সময় এমন একটি হেল্পলাইনের খুবই প্রয়োজন ছিল, বলেন অধ্যাপক অপূর্বানন্দ।
বর্তমানে দেশের ১০০ শহরে ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’ এর স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত থাকছেন। শহর ও সংলগ্ন জায়গায় গণপিটুনি কিংবা ঘৃণার রাজনীতির শিকারদের সরাসরি সহায়তা করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। পুলিশ অভিযোগ না নিলে ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট’ এর তরফে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হবে, পাশাপাশি আক্রান্তদের আইনি সহায়তাও দেবে এই হেল্প লাইন।
এমনকী হামলার ঘটনা ঘটার আগেই যদি কেউ সেই ইঙ্গিত পান, তাহলেও হেল্পলাইনে ফোন করে তা জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সমাজকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকদের বিষয়টি সম্পর্কে আগেভাগেই অবহিত করা সম্ভব হবে। এতে অনেকাংশেই হামলা রোখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ইউএএইচের অন্যতম সংগঠক নাদিম খান। জেএনইউয়ের ছাত্র নেতা উমর খালিদ বলেন, আপাতত দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জামিয়া নগরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে হেল্পলাইনের কাজ শুরু হচ্ছে। পরবর্তীতে এই কাজের জন্য আলাদা করে লোক নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাতে অফিস বন্ধ থাকবে। তবে রাতে কেউ কোনও বিপদে পড়লে সংগঠনের প্রতিনিধিদের সরাসরি ফোন করতে পারবেন, জানাচ্ছেন উমর খালিদ।

Comments are closed.