আর্থিক অনটনে দশম শ্রেণির পরেই স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। সংসার চালাতে কখনো মাছ বিক্রি করেছেন, কখনো করেছেন পাহারাদারের কাজ। কিন্তু পড়াশোনায় ইতি টানেননি। স্কুলছুট হওয়ার কয়েক বছর পর ফের পড়াশোনা শুরু করে সম্প্রতি পিএইডি থিসিস জমা করলেন কেরলের অটো চালক অজিত কেপি।
জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কীভাবে লক্ষ্যভেদ করতে হয় তার বড় উদাহরণ হতে পারেন কেরলের এর্নাকুলাম জেলার আঁচলপেট্টির বাসিন্দা বছর ৩০ এর অজিত কেপি। তাঁর বয়স তখন মাত্র ৩ মাস। বাড়ি ছেড়ে চলে যান বাবা। নিজের অজান্তেই অজিত ঢুকে পড়ে জীবনের কঠিনতম লড়াইয়ে, যার নাম বাঁচার লড়াই। পেট চালাতে আনারসের খেতে কাজ নেন অজিতের মা। অজিতের বয়সী বাচ্চারা যখন পড়াশোনা, খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকত, তখন মাকে সাহায্য করতে প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজে ব্যস্ত অজিত। একটু বড় হয়ে শুরু করেন অটো চালানো। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি ইচ্ছে কমেনি। অটো চালিয়ে পেটের খিদে মেটানোর পর তাই ফের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।
রুজি রোজগার করে বাড়ি ফিরে খানিক বিশ্রাম, তারপর পড়াশোনা। এই রুটিনে বছরের পর বছর নিজেকে বেঁধে রাখেন অজিত। এভাবেই বারো ক্লাস পাশ করে মালায়ালম ভাষায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হন বাড়ির কাছে এক কলেজে। ইচ্ছে ছিল বিএ পাশ করে মোটামুটি একটা চাকরি জুটিয়ে নেওয়া। কিন্তু তাঁর মেধা আর কঠোর পরিশ্রম চোখ এড়ায়নি কলেজের অধ্যাপক ও সহপাঠীদের। মূলত তাঁদের উৎসাহে বিএড ডিগ্রিও লাভ করেন। আর সেই সঙ্গে চলত অটো চালিয়ে রোজগার। না, বিএডের পরও ইতি টানেননি পড়াশোনায়। এবার অজিত লক্ষ্য স্থির করে ফেলেন অধ্যাপক হওয়ার। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাহায্য আর উৎসাহ নিয়ে উচ্চশিক্ষায় ব্রতী হন অজিত। মালায়ালাম ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ পাশ করে গবেষণার সুযোগ মেলে। কয়েকদিন আগেই তাঁর পিএইচডির গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন অজিত কেপি। আর এজন্য অধ্যাপক ডঃ টি অনিতাকুমারী ও তাঁর সহপাঠিনী অর্চণা মোহনের অবদান অনস্বীকার্য বলে জানান অজিত। তবে পিএইচডির থিসিস জমা দেওয়ার পরও, অটো রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন অজিত কেপি। জীবন-যুদ্ধে পোড় খাওয়া সৈনিক অজিত কেপির কথায়, তাঁকে বড় করার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন মা। তাঁর একান্ত চেষ্টা ছিল মাকে ভালো রাখার, মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। সেই লক্ষ্যেই একের পর এক বাধা পার করছেন অজিত।
Comments are closed.