স্কুটির সঙ্গে বাঁধা বাক্স ভর্তি পুরনো বই, বাক্সে লেখা রয়েছে মোবাইল নম্বর। কেউ পুরনো বই দান করতে চাইলে স্কুটি ছুটিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান পঞ্জাবের চণ্ডিগড়ের যুবক সন্দীপ কুমার। এভাবে গত ২ বছরে প্রায় ১০ হাজার পুরনো বই-খাতা জোগাড় করে কয়েকশো দুঃস্থ পড়ুয়াকে স্কুলছুট হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন বছর ২৮ এর এই যুবক। দরিদ্র ও মেধাবী স্কুল-কলেজ পড়ুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের প্রতিনিয়ত বড় কিছু করার জন্য উৎসাহিত করেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওপেন আইজ ফাইন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ কুমার।
হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার অন্তর্গত ধানিমৌ গ্রামে জন্ম সন্দীপ কুমারের। গ্রামের সরকারি স্কুল থেকে বারো ক্লাস পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য চণ্ডিগড় চলে যান। স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষকতাকে পেশা করবেন বলে ঠিক করেন সন্দীপ কুমার। ভর্তি হন জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং কোর্সে। ট্রেনিংয়ের সুবাদে বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পান। সন্দীপের কথায়, বেসিক ট্রেনিংয়ের ফাইনাল ইয়ারে এসে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে পড়ানোর সময় দরিদ্র ছাত্রদের অবস্থা তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। দেখেন, শেখার তীব্র ইচ্ছা পড়ুয়াদের। কিন্তু যখনই তাদের নোট লিখতে বলতেন, অনেকেই জুলজুল চোখে চেয়ে থাকত শিক্ষানবিশ শিক্ষকটির দিকে। সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অধিকাংশের যে খাতা-পেনসিল নেই। এমনকী কারও কারও কাছে পাঠ্য বইও নেই। সরকারি স্কুলে বিনামূল্যে শিক্ষা বা বই কেনার টাকা দেওয়া হলেও অভাবের তাড়নায় অনেকে অভিভাবক বই না কিনে সংসার খরচে সেই টাকা খরচ করে ফেলেন বলে জানতে পারেন সন্দীপ। কয়েকজন পড়ুয়াকে নিজের টাকায় খাতা,পেনসিল কিনে দিয়েছিলেন সন্দীপ। সেই কথা ছড়িয়ে পড়তেই কচিকাঁচারা প্রায়ই বই-খাতা-কলম চেয়ে ‘মাস্টারজি’র কাছে আবদার করতো। সেখান থেকেই এই পুরনো বই-খাতা জোগাড়ের ভাবনা মাথায় আসে শিক্ষানবিশ শিক্ষকটির।
এক ক্লাস পাশ করে আর এক ক্লাসে উঠলে হয় পুরনো বই বিক্রি করে দেয় পড়ুয়ারা, নয়তো বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকে বাড়িতে। সেই সব বই জোগাড় করতে বাড়ি বাড়ি যেতে শুরু করেন সন্দীপ। পুরনো পাঠ্য বই, গল্প বই, কয়েকটা পৃষ্ঠা অবশিষ্ট রয়েছে এমন খাতা, পুরনো কলম বা জ্যামিতি বাক্স এসব জোগাড় করে দুঃস্থ ছাত্রদের বিলি করা শুরু করেন তিনি। এইভাবে চণ্ডিগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায় সন্দীপ কুমারের। পুরনো বই-খাতা জড়ো হলেই সন্দীপকে ফোন করে ডেকে নেন মানুষজন।
সন্দীপ কুমারের এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে প্রচুর যুবক তাঁর সঙ্গী হন। এইভাবে নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওপেন আইজ ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে। এখন চণ্ডিগড়জুড়ে ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী পুরনো বই-খাতা জোগাড় করে দুঃস্থ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ার হাতে তুলে দেন। সংস্থার নিজস্ব অফিসও রয়েছে। সেখানে গিয়েও পুরনো বই দান করেন অনেকে। এইভাবে গত দু’বছরে প্রায় ১০ হাজার বই বিলি করেছেন সন্দীপ কুমার। অভাবী পড়ুয়ারা কোনরকম সমস্যায় পড়লেই হাজির হয় তাদের প্রিয় ‘মাস্টারজি’র কাছে।
Comments are closed.