চিনের অর্থনীতিতে হঠাৎ ভাটার টান! জুলাই মাসে কমিউনিস্ট চিনের অর্থনীতি ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নগামী, খবর রয়টার্সের
পণ্য-যুদ্ধের গেঁড়োয় চিনের অর্থনীতিতে ভাঁটার টান! আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ, চিনের অর্থনীতির উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে গত দু’দশকে এমন মন্দার মুখে পড়েনি মাওয়ের দেশ, বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আমেরিকার সঙ্গে সাম্প্রতিক খারাপ বাণিজ্যিক সম্পর্কের জের এসে পড়ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির উপর। তার প্রভাব সামলাতেই চিনের অর্থনীতি হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে চিনের অর্থনীতি সবচেয়ে নিম্নগামী। যা ভেঙে দিয়েছে শেষ ১৭ বছরের রেকর্ড। এর নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে চিন-আমেরিকা পণ্য মাশুল নিয়ে বিতণ্ডাকে ধরা হচ্ছে। চিনে উৎপাদিত অসংখ্য পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, চিনে উৎপাদিত পণ্য কম শুল্কের সুযোগ নিয়ে আমেরিকার বাজার দখল করছে, অথচ সে দেশে মার্কিন পণ্য ঢুকতে গেলে দিতে হচ্ছে অনেকগুণ বেশি শুল্ক। তাই চিনা পণ্যের উপরও বড় অঙ্কের শুল্ক ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার সরাসরি প্রভাব এসে পড়েছে চিনের অর্থনীতিতে।
কমছে উৎপাদন, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব এসে পড়ছে বাজারের উপর। অর্থনৈতিকভাবে নড়বড়ে অবস্থার মধ্যে থাকা চিনের বাণিজ্য মহল তাই সরকারের কাছে স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। সরকারি আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া এই পরিস্থিতি সামলানো অসম্ভব বলে দাবি করছেন তারা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে চিনের আর্থিক বৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ, যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। চিনের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যেভাবে বিনিয়োগের শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগবে। কিন্তু সরকার এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করলে, দ্রুত খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করছেন শিল্প সংস্থার আধিকারিকরা। কিন্তু চিন সরকার পরিস্থিতি পরিবর্তনে হস্তক্ষেপ করবে কি? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সমস্যা নিরসনে ব্যাঙ্কগুলোর ঋণদান এবং সুদের হার সংক্রান্ত নীতিও পর্যালোচনা করার দাবি উঠছে। এদিকে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো শিল্প সংস্থার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এ বছরের শেষ নাগাদ সরকারি হস্তক্ষেপ আসতে পারে। কারণ শি জিনপিং গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, তবেই হস্তক্ষেপের পক্ষপাতী বলে সূত্রের খবর।
গত এক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পণ্য যুদ্ধ চলছে চিনের। অর্থনীতিবিদদের একটি অংশের মতে, এর ফলে মন্দার আশঙ্কায় বেশ কয়েকটি শিল্প সংস্থা উৎপাদনে কাটতির পাশাপাশি লগ্নির ব্যাপারেও আরও সতর্কতা অবলম্বন করছে। আর এই সাবধানী পদক্ষেপেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিনা অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের দাবি, দুনিয়ার সামগ্রিক শিল্প উৎপাদনে রাশ টানলে তার অবশ্যম্ভাবী ফল অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ। চিনের ক্ষেত্রেও ঠিক একই জিনিস হচ্ছে।
Comments are closed.