আইনের ছাত্রী মেয়ে কলেজে তাঁর সিনিয়র, আবার একই কলেজে বাবার এক ক্লাস নীচে পড়ে ছেলে। বাবা-ছেলে-মেয়ে, এই ৩ কলেজ পড়ুয়ার কাহিনি যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি প্রশংশনীয়।
পারিবারিক অর্থাভাবে বারো ক্লাসের পর পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল মুম্বইয়ের বাসিন্দা রাজেশ ভোরাকে। তবে আইন বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহ আর মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়ার খেদ, এই দুই কারণে বছর কয়েক আগে ফের পড়াশোনা শুরু করেন ৫৮ বছরের রাজেশ ভোরা। আর আইন নিয়ে ভর্তি হন মেয়ের কলেজেই। এই একই কলেজেই আইন নিয়ে পড়ছেন বাবা রাজেশ ভোরা ও তাঁর দুই সন্তান।
ছোট থেকেই আইনের খুঁটিনাটি বিষয়ে তীব্র কৌতূহল রাজেশ ভোরার। ইচ্ছা ছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু সাংসারিক কারণে বারো ক্লাসের পরে ইতি পড়ে পড়াশোনায়। এরপর বিভিন্ন ল’ফার্মে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। একাধিক পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আইন নিয়ে তাঁর প্রবল উৎসাহে কখনও ভাটা পড়েনি। সেই উৎসাহ আর অভিজ্ঞতার ওপর ভর করেই, কোনও আইনের ডিগ্রি ছাড়া ১৯৮৯ সালে লিগাল কনসালটেন্সি ফার্ম খুলে ফেলেছিলেন রাজেশ ভোরা। এখন আইন পাশ করা প্রচুর ছেলেমেয়ে তাঁদের কেরিয়ার শুরু করেন আইনের ছাত্র রাজেশ ভোরার ফার্মে।
কিন্তু আইনের ডিগ্রি না থাকার খেদ তাড়িয়ে বেড়াত রাজেশ ভোরাকে। বড় মেয়ে ডাক্তার। ছোট মেয়ে ও ছেলে দু’জনেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন মুম্বইয়ের এক কলেজে। বাবার অপূরণীয় ইচ্ছার কথা তাঁরা ভালোভাবেই জানতেন তাঁরা। পরিবারের উৎসাহেই মেয়ে ধ্রুবির কলেজে ২০১৩ সালে আইন নিয়ে ভর্তি হন রাজেশ ভোরা।
বয়সের কারণে কলেজে ভর্তি হতে বেশ বেগ পেতে হয় তাঁকে। সে সব মিটে গেলেও মেয়ের কলেজেই তাঁর জুনিয়র হয়ে ক্লাস করতে যাওয়ার সময় বেশ অপ্রস্তুতিতে পড়তেন বাবা-মেয়ে দু’জনেই। ধীরে-ধীরে অবশ্য ছবিটা বদলে যায়। তাঁর চেয়ে বয়সে ঢের ছোট সহপাঠীদের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে যায় মিশুকে রাজেশ ভোরার। আর ক্লাস শেষে মেয়ের সঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া থেকে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গেও আড্ডায় মশগুল হতেন বাবা। কলেজে তাঁর ‘সিনিয়র’ মেয়ের কাছ থেকে নোটস নিতে যেমন কুণ্ঠা বোধ করতেন না রাজেশ। এর মধ্যেই ছোট ছেলেও ভর্তি হয় একই কলেজে।
এ বছরই আইন পাশ করে ধ্রুবি ভোরা প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছেন। বাবা রাজেশ ভোরাও ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। আগামী দিনে বাবা-মেয়ে-ছেলে ৩ জনেরই একই ইচ্ছা, একই ল’ফার্ম থেকে নিজেদের কেরিয়ার শুরু করার। জীবন বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে বাবা ও দুই সন্তান এখন একই স্বপ্নপূরণে দৌড়চ্ছেন। আর রাজেশ ভোরা প্রমাণ করলেন, শেখার কোনও বয়স নেই।
Comments are closed.