এ বছর প্রথম ৭ মাসে ভারতে ৫৮ জন এমডি কিংবা সিইও ইস্তফা দিয়েছেন বড় সংস্থায়! কাজের চাপ না মন্দার প্রভাব?
গাড়ি শিল্পে মন্দার ছোঁয়াচ লেগেছে বিস্কুট, টেক্সটাইল সহ একাধিক ক্ষেত্রে। কাজ হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু ছাঁটাই তো চলছে মূলত নীচু স্তরে। তাহলে কি সংস্থার উচ্চপদে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সুরক্ষিত? শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একেবারেই তা নয়। বরং সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের প্রথম ৭ মাসের মধ্যে দেশে ৫৮ জন এমডি কিংবা সিইও চাকরি ছেড়েছেন। সবকটি সংস্থাই স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত। গত বছর এই সময়ের মধ্যে চাকরি ছেড়েছিলেন ৫৯ জন এমডি বা সিইও। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চপদে এমন ইস্তফার হিড়িকের একমাত্র কারণ মন্দা নয়, বরং প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা কাজের চাপ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পদ ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) কিংবা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও)। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিন চাকরিতে যোগ দেওয়া তরুণ কিংবা দীর্ঘদিন চাকরি করে চলা উচ্চাকাঙ্খা সম্পন্ন ব্যক্তি, সবারই নজর সেই মহার্ঘ চেয়ারের দিকে। কিন্তু পদ মর্যাদায় যত উন্নতি, কাজের চাপেরও চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়বাড়ন্ত। সংস্থার বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, ইদানীং ব্যবসার পরিবেশে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। স্বভাবতই সিইওদের ভূমিকাতেও এসেছে বড়সড় বদল। এই বদলের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়ছেন কেউ কেউ। ফলশ্রুতি, ইস্তফার হিড়িক, এমনটাই মনে করছেন, ম্যারিকোর চেয়ারম্যান হরিশ মারিওয়ালা।
তবে কেবল কাজের চাপই বাড়ছে না, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিইওদের বেতনও। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে ঝুঁকির পরিমাপ করতে গিয়ে। প্রাইম ডেটাবেস গ্রুপের এমডি প্রণব হলদেয়ার মতে, প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এমডি বা সিইওদের কাজের ঝুঁকির পরিমাণ। কিন্তু বাড়তি বেতন সেই ঝুঁকির ক্ষতিপূরণ করতে পারছে না। ফলে দৈনন্দির কাজও ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে দোসর হিসেবে যোগ হয়েছে মন্দার প্রভাব। যা সিইওদের কাজকে কঠিনতর করে তুলছে। কখনও কখনও এই হিমালয়সম চাপ নিতে পারেন না সংশ্লিষ্ট সিইও কিংবা এমডি।
ভারতে বেসরকারি সংস্থার সর্বোচ্চ পদের চাকরি ছাড়ার হিড়িক অবশ্য নতুন নয়। ২০১৮ সালের প্রথম ৭ মাসে ইস্তফা দিয়েছিলেন ৫৯ জন এমডি বা সিইও। যা বছর শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১০৮ এ। এই পরিসংখ্যান গত দেড় দশকে সর্বোচ্চ। প্রাইস ওয়াটার হাউসকুপার্স স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিইও সাকসেস স্টাডি বলছে, ভারতে সিইওদের চাকরি ছাড়ার হিড়িক বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ২০১৮ সালে গোটা বিশ্বে যতজন সিইও এবং এমডি চাকরি ছেড়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও, তা গত ১৯ বছরে সর্বোচ্চ। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্বের বৃহত্তর আড়াই হাজার সংস্থা পেয়েছে নতুন সিইও। যা গোটা পৃথিবীর হিসেবের ১৭.৫ শতাংশ। তবে সমীক্ষাটি বলছে, সংস্থার আর্থিক অগ্রগতির হার বজায় রাখতে না পেরে যত না চাকরি ছেড়েছেন, তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি চাকরি ছেড়েছেন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন, কাজের চাপের সঙ্গে সমানুপাতিক সম্পর্ক আপনার ব্যবহারের। ফলে কাজের চাপ বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে আপনার মানসিক অবস্থার উপরও। পিডব্লুসির সমীক্ষায় উঠে আসা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, পৃথিবীজুড়ে যত সংস্থার সিইও এবং এমডিরা ইস্তফা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ভারত, ব্রাজিল এবং রাশিয়ায় সেই সংখ্যা ২১.৬ শতাংশ।
Comments are closed.