১৯ শে অগাস্ট দুপুর ৩ টে। ইউনিভর্সিটি অফ সাওপাওলোর গবেষক বছর কুড়ির অ্যানা আন্তোনিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক! এ কেমন আকাশ! সেদিন আকাশের দিকে মুখ তুলে চেয়ে অ্যানার মতোই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সাওপাওলোর বাসিন্দারাও। গোটা আকাশ ছেয়ে গিয়েছে কালো কালো রোঁয়ার মতো মেঘে… এত কালো মেঘ আসছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহরে সন্ধে নামে, নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগে।
হতবাক সাওপাওলোর বাসিন্দারা সন্ধে ৭ টা নাগাদ জানতে পারেন আসল কারণ। দক্ষিণ মেরুর দিক থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়া, আর অ্যামাজনে লাগা আগুনের ধোঁয়া, এই দুয়ের জেরে ব্রাজিলের সাওপাওলোতে সন্ধে ঘনিয়েছে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগে। সাও পাওলোতে আসা ওই ধোঁয়া উড়ে এসেছে আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের অ্যামাজনের দাবানল থেকে।
ব্রাজিলের পরিবেশ দপ্তর বলছে, ইদানীং অ্যামাজনে দাবানলের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি গবেষণা করে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ স্পেস রিসার্চ (ইমপে) দেখতে পেয়েছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত অ্যামাজনে মোট ৭২ হাজার ৮০০টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি।
কিন্তু আচমকা অ্যামাজনে এমন ভয়াবহ দাবানলের কারণ কী? কেবলমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই কি বারবার আগুনে ছাড়খাড় হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস? নাকি নেপথ্যে আছে ব্যবসায়িক কোনও ছক?
আমাজন রেন ফরেস্টের প্রায় ৭৯০০ বর্গ মাইল এলাকা, যা লন্ডন শহরের থেকে অন্তত ৫ গুণ বড়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত। নির্বিচারে অরণ্য নিধনকেই এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী এডসন ডুয়ার্ট। প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর কিছু নীতিই বনাঞ্চল হ্রাসের হার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে বলে অভিযোগ ব্রাজিলের বাসিন্দাদের একাংশের। অভিযোগটি কতখানি সত্যি?
ইমপের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে অ্যামাজনের সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, অ্যামাজন বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার এই হার তিনগুণ হয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোরানো জানুয়ারিতেই কুর্সিতে বসেছেন। শুধুমাত্র গত মাসেই ২২০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল খালি করা হয়েছে, যা গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৮০ শতাংশ হারে বেশি।
আর অ্যামাজনের লাগাতার দাবানলের ঘটনায় নড়চড়ে বসেছে দুনিয়ার শক্তিশালী দেশগুলো। ব্রাজিলের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। জার্মানি এবং নরওয়ে সরকার ব্রাজিলের আমাজন ফান্ডে অর্থ অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে, যা অ্যামাজনের বনভূমি উজাড় হওয়া ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার অংশ হিসাবে ব্রাজিল সরকারকে দেওয়া হত। ব্রাজিল অবশ্য অনুদান বন্ধ হওয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। প্রেসিডেন্ট বলসোনারো বলছেন, ব্রাজিলের কারও অনুগ্রহের দরকার নেই।
অ্যামাজনের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের জন্য এই বনভূমি রক্ষা করতেই হবে। না হলে বিপন্ন হতে পারে মানব সভ্যতা। যদিও প্রেসিডেন্ট বলসোনারো অ্যামাজন রেন ফরেস্টকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহারের সিদ্ধান্তে এখনও অনড়, এমনটাই অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
Comments are closed.