রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহে জগদীপ ধানকর প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য কেন দার্জিলিংকে বেছে নিলেন, প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে
রাজ্যে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য নতুন রাজ্যপাল জগদীপ ধানকর কেন দার্জিলিং জেলাকে বেছে নিলেন, তা নিয়ে জল্পনা, প্রশ্ন শুরু হয়েছে রাজ্য প্রশাসন এবং তৃণমূলের অন্দরে। ২৪ শে সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার শিলিগুড়ির এই বৈঠকে রাজ্যপাল দার্জিলিং জেলার জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে ঠিক কী জানতে চান, সেদিকেই এখন তাকিয়ে নবান্ন। বিশেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কাণ্ডের পর যেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে, সেখানে জগদীপ ধানকরের এই বৈঠক নিয়ে সংশয় এবং জল্পনা তৈরি হয়েছে নবান্নে। যদিও সরকারিভাবে নবান্নের পক্ষ থেকে এই বৈঠক নিয়ে কিছু বলা হয়নি, কিন্তু তৃণমূলের মহাসচিব এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান তাঁর পদের গরিমা রক্ষা করবেন।
গত ২১ শে সেপ্টেম্বর রাজভবনের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ২৪ শে সেপ্টেম্বর রাজ্যপাল ধানকর সরকারি সফরে শিলিগুড়ি যাবেন এবং সেখানে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনের পর প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে থাকবেন জেলা শাসক, সাংসদ, জেলার সমস্ত বিধায়ক, শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের মেয়র এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি। যেভাবে প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, দার্জিলিংয়ের সাংসদ থেকে শুরু করে বিধায়ক, মেয়র, সভাধিপতি সকলেই হয় বিজেপি, নয়তো সিপিএম বা কংগ্রেসের প্রতিনিধি। দার্জিলিং জেলায় ৬ জন বিধায়কের মধ্যে শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি সিপিএম ও কংগ্রেসের দখলে। অন্যদিকে, দার্জিলিংয়ের বিধায়ক বিজেপির এবং কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক মোর্চার। শিলিগুড়ির মেয়র সিপিএমেরই অশোক ভট্টাচার্য এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতিও সিপিএমের। সেই হিসেবে বলতে গেলে, দার্জিলিংই এই মুহূর্তে রাজ্যে একমাত্র জেলা যেখানে কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই তৃণমূলের নেই। যদিও মঙ্গলবারের বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছেত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তবুও রাজ্যপালের এই বৈঠক নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রাজ্য প্রশাসন এবং তৃণমূলের অন্দরে। কারণ, তৃণমূল মনে করছে, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম, রাজ্যের এই তিন বিরোধী দলের বক্তব্য জানতেই ইচ্ছে করে দার্জিলিং জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জেলার কোনও জনপ্রতিনিধি না থাকার ফলে বিরোধীরা বিভিন্ন অভিযোগ করলেও, রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করার কেউ থাকবেন না।
তৃণমূল শিবিরের আরও বক্তব্য, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ প্রকাশ্যেই আলাদা গোর্খাল্যান্ড বা দার্জিলিংকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুলেছিলেন। তা নিয়ে গোটা জেলাতেই একটা অস্থিরতা তৈরির পরিস্থিতি হতে পারে। সেখানে রাজভবন এই বৈঠক করার জন্য দার্জিলিং জেলাকেই বেছে নেওয়ায় প্রশাসন তাকিয়ে রয়েছে, রাজ্যপাল সেখানে কী জানতে চান তার দিকে।
গত সপ্তাহেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়র যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা হয়, সেখানে রাজ্যপালের ভূমিকায় একেবারেই খুশি নয় তৃণমূল শিবির। এমনকী তৃণমূল এবং রাজ্যপালের পক্ষ থেকে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতিও দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিংয়ে মঙ্গলবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে নবান্ন এবং রাজ্যের শাসক দল।
Comments are closed.