শেখার কোনও বয়স নেই। এই প্রাচীন প্রবাদকে আরও একবার সত্যি করে দেখালেন কেরলের ৮৫ বছরের কেম্বি। সম্প্রতি কেরল স্টেট লিটারেসি মিশনের (কেএসএলএম) সাক্ষরতার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাতেও পাশ করে তাক লাগালেন কেরলের ওয়েনাড়ের এই আদিবাসী বৃদ্ধা।
ওয়েনাড়ের মানন্থাভেদির পদাচিকুন্নু কলোনির বাসিন্দা কেম্বি। বয়সের কারণে শরীরে ঝুঁকে গিয়েছে, চোখেও ভালো দেখেন না। দু’হাতেও তেমন বল নেই। কিন্তু শেখার অদম্য ইচ্ছার কাছে শরীর কি কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়? কাঁপা কাঁপা হাতে কলম ধরেই সাক্ষরতা অভিযান পার করলেন এই পক্ককেশ আদিবাসী।
কেএসএলএমের সাক্ষরতা অভিযানে এবছরের ২ হাজার ৯৯৩ জনের মধ্যে প্রবীণতম কেম্বি। যৌবনে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেছেন। দারিদ্রের কারণে পড়াশোনা হয়নি। কিন্তু মনে পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল ষোলোআনা। সেই ইচ্ছা উস্কে দেন সাক্ষরতা অভিযানের প্রচারক ক্লারাম্মা ভিভি ও সুনীতা পি। ওয়েনাড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়কে সাক্ষর করার লক্ষ্যে প্রচার শুরু করেছিলেন কেএসএলএমের কর্মী ক্লারাম্মা ও সুনীতা। অন্যান্যরা যখন বয়সের কারণে খাতা-পেনসিল তুলে নিতে দ্বিধা করেছেন, কেম্বির ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। তাঁকে বলা মাত্রেই এককথায় বই-খাতা নিয়ে পড়তে বসতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। কেম্বির কথায়, পাঠশালায় অন্যান্য সহপাঠী যেমন সাহায্য করেছেন, তাঁর দুই ছেলেও তাঁকে সমান উৎসাহ দিয়েছেন পড়াশোনায়। পেশায় দুই ছেলে ঠিকা কর্মী হলেও তাঁদের কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছিলেন কেম্বি। ছেলেরা আগ্রহ সহকারে মাকে পড়াশোনা করিয়েছেন বলে জানান আদিবাসী বৃদ্ধা। যদিও শুধু সাক্ষর হয়েই থামতে চান না ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। ঝুলে যাওয়া চামড়া আর কোটরাগত চোখে জ্বলজ্বল করছে শেখা ও জানার তীব্র স্পৃহা। কেম্বার প্রচণ্ড ইচ্ছা কম্পিউটার শেখার। সুযোগ পেলে প্রযুক্তিতেও নিজের সাক্ষরতার নজির রাখতে চান কেম্বি।
Comments are closed.