তিহার জেলে ১০ দিন কাটাতে হয়েছিল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে! খুনের চেষ্টা সহ একাধিক মামলা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে
অমর্ত্য সেনের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জানেন কি, আজকের নোবেল প্রাপককে একসময় দিল্লির তিহার জেলে থাকতে হয়েছিল টানা ১০ দিন! হ্যাঁ, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রাক্তনী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একসময় তিহার জেলে যেতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরকে ঘেরাওয়ের জন্য। তিহার জেলে কাটাতে হয়েছিল ১০ দিন। স্ত্রী এস্থার ডুফলোর সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর পুলিশের লাঠিও পড়েছিল।
সালটা ১৯৮৩। সেই বছরেই জেএনইউ থেকে এমএ পাশ করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তখন এমফিল করছেন। নির্মলা সীতারমন ১৯৮৪ সালে এমফিল শেষ করেন, আর ১৯৮৩ সালে এমএ পাশ করেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন অভিজিতকে জেলে যেতে হয়েছিল?
নোবেল জয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদের নিজের কথায়, ‘৮৩ সালের এক গ্রীষ্মের দিন। জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্টকে বিতাড়নের প্রতিবাদে ভাইস-চ্যান্সেলরের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা। দীর্ঘ সময় এই ঘেরাওয়ের পর তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৬ সালে জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের তৎকালীন সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে ইংরেজি দৈনিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’এ এই কথা লিখেছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ভাইস-চ্যান্সেলরকে ঘেরাওয়ের পর তৎকালীন কংগ্রেস সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ পাঠায়। জেএনইউ ক্যাম্পাস ছেয়ে যায় পুলিশে। কয়েকশো বিক্ষোভকারী পড়ুয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁকে ১০ দিন থাকতে হয় তিহার জেলে। পুলিশের লাঠিপেটাও খেতে হয় আজকের নোবেল জয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদকে।
জেএনইউ ক্যাম্পাসে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার হন বিহারের বেগুসরাইয়ের কানহাইয়া কুমার। সেই প্রসঙ্গে অভিজিৎ লিখেছিলেন, ১৯৮৩ সালে ভিসি’কে ঘেরাওয়ের জন্য দেশদ্রোহিতার অভিযোগ না হলেও, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। যদিও পরে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ১০ দিন তিহার জেলে কাটাতে হয় তাঁকে।
অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, সেই সময়ও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা সবাই বামপন্থী রাজনীতিতে যুক্ত। কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনার প্রেক্ষিতে অভিজিৎ লিখেছিলেন, পড়ুয়ারা এমন কিছু বলবেন, একদিন হয়তো নিজেরাই সেই মত থেকে সরে আসবেন। কিন্তু তাঁদেরকে সেই মত প্রকাশের জায়গাটা দেওয়া দরকার। মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যেকেরই থাকা উচিত বলে মনে করেন আজকের নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Comments are closed.