মারাদোনা-মেসির দেশে ফের ক্ষমতায় বামপন্থীরা, অতি দক্ষিণপন্থীদের হারিয়ে সরকার গড়ার পথে আলবার্তো ফার্নান্ডেজ
লাতিন আমেরিকার আরও এক দেশে ফের ক্ষমতায় বামপন্থীরা।
মন্দা এবং নীতিপঙ্গুত্বের ধাক্কায় বেসামাল আর্জেন্টিনার অর্থনীতি। দেশে কর্মসংস্থানের হাল শোচনীয়, প্রবল মুদ্রাস্ফীতি এবং সরকারি বিভিন্ন নীতির প্রভাবে বন্ধ হতে বসেছে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসা। বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো দেশে দিনে দিনে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে মেসির দেশে ফের ক্ষমতায় এলেন বামপন্থী মনোভাবাপন্ন আলবার্তো ফার্নান্ডেজ। তাঁর দাপটে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গেল অতি দক্ষিণপন্থী মরিসিও মাক্রির ক্ষমতায় ফেরার আশা।
অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে নির্বাচনে যে ধাক্কা খাবেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মরিসিও মাক্রি, তা খানিকটা হলেও আঁচ করা গিয়েছিল। প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মাক্রির উদারবাদের লাইন। জনসমর্থনেও ধস নেমেছিল। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, কঠিন আর্থিক পরিস্থিতিতে বিকল্প মডেলের স্বপ্ন দেখানো বিরোধী নেতা আলবার্তো ফার্নান্ডেজের কাছে কার্যত গো-হারা হেরেছেন অতি দক্ষিণপন্থী মাক্রি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জয়ী আলবার্তো পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ ভোট, অন্যদিকে পরাজিত মাক্রি পেয়েছেন অনেকটাই কম, ৪১ শতাংশ।
রবিবার রাতে পেরোনিস্ট নেতার জয়ের বার্তা ছড়াতেই বুয়েনস আয়ার্সের রাস্তায় নেমে আসেন আট থেকে আশি। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে তাঁদের স্লোগান, আর্জেন্টিনা এবার ফিরবে স্থিতির পথে। রবিবার গভীর রাতে নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট হতেই আলবার্তো ফার্নান্ডেজ জানান, এখন তাঁর কাছে একমাত্র লক্ষ্য হল, বিকল্প অর্থনীতির মাধ্যমে আর্জেন্টিনাবাসীর দুর্দশা লাঘব করা। তিনি বলেন, এবার প্রকৃত অর্থেই মানুষের হাতে দেশের শাসনভার ফিরে এল। তবে তাঁর বিকল্প অর্থনীতির মডেল কেমন হবে, তা অবশ্য খোলসা করেননি বাম মনোভাবাপন্ন জাস্টিসিয়ালিস্ট বা জাস্টিস পার্টির (জেপি) নেতা আলবার্তো।
তবে আর্জেন্টিনার বেলাইন অর্থনীতিকে ফের পথে আনতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে আলবার্তোকে। দেশে যে হারে কর্মহীনের সংখ্যা বাড়ছে, তা গভীর চিন্তায় ফেলেছে নতুন প্রেসিডেন্টকে। পাশাপাশি, দেশে চাহিদার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারি নীতির কারণে ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্পের অবস্থাও খারাপ। তার মধ্যে পাল্লা দিয়ে সম্পদ বাড়ছে দেশের মুষ্টিমেয় বিত্তশালীদের। চিলের পর যা নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ শুরু হয়েছে মারাদোনার দেশেও। এই গণরোষ সামলানো জরুরি। কারণ যে কোনও মুহূর্তে তা হাতে বাইরে চলে পারে বলে মনে করছে বুয়েনস আয়ার্সের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। সর্বোপরি রয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের সঙ্গে আর্জেন্টিনার জটিলতার জেরে আটকে থাকা আর্থিক অনুদানকে ফের চালু করা। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে তিনি কী করেন, সেদিকেই তাকিয়ে মেসি-মারাদোনার দেশের মানুষ।
Comments are closed.