গ্রামীণ চিনে মানুষের আয় কমছে, এবছর প্রথম ৬ মাসে কমেছে ২০ শতাংশ! সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চাঞ্চল্য

ক’দিন আগেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশবাসীর কাছে আবেদন করে বলেছিলেন, ‘আসুন আগামী বছরের মধ্যে চিন থেকে দারিদ্র মুছে ফেলি’। তারপরই প্রশ্ন উঠেছিল, মাওয়ের চিন কি সত্যিই সামগ্রিক দারিদ্র দূরীকরণের প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে? তা না হলে শি জিনপিং সামগ্রিক দারিদ্র দূরীকরণের আবেদন দেশবাসীর কাছে রাখলেন কীভাবে? এই জল্পনার মধ্যেই চিনের কৃষি মন্ত্রকের একটি পরামর্শদাতা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। যে রিপোর্ট শি জিনপিংয়ের আবেদনকেই গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। কী আছে সেই রিপোর্টে?
বেজিং ওরিয়েন্ট অ্যাগ্রিবিজনেস নামের পরামর্শদাতা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, চিনের গ্রামে দারিদ্র বাড়ছে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সাল থেকেই গ্রামীণ এলাকায় মানুষের আয় ক্রমশ কমছে এবং এই বছরের প্রথম অর্ধে তা পড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
রবিবার হংকং থেকে প্রকাশিত সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কৃষি মন্ত্রককের পরামর্শদাতা সংস্থার বিশ্লেষক মা ওয়েনফেং জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়, গ্রামীণ চিনে দারিদ্র ফের থাবা বসাচ্ছে।
গত রবিবার চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছিল, ২০১৮ পর্যন্ত শেষ ৬ বছরে বামপন্থী চিন ৮২.৩৯ মিলিয়ন গ্রামীণ বাসিন্দাকে দারিদ্র থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি, গত ৪০ বছরে ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের দারিদ্রসীমা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। যা সেই সময় গোটা বিশ্বের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ।
এই প্রেক্ষিতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে বেজিং ওরিয়েন্ট অ্যাগ্রিবিজনেসের রিপোর্ট নিয়ে। সংস্থার দাবি, চিন-মার্কিন শুল্ক যুদ্ধ এবং গ্রামের তুলনায় শহরে সম্পদ বৃদ্ধির অনুপাত মাত্রাতিরিক্তভাবে বেশি হওয়ারই ফলশ্রুতি গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রের পুনরাগমন। প্রসঙ্গত চিনের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই গ্রামীণ এলাকার।
সরকারি তথ্য বলছে, গ্রামীণ চিনে মানুষের উপার্জন ক্রমশ কমছে। ২০১৮ সালে স্থানীয় গ্রামীণ শ্রমিকদের মাথাপিছু গড় আয় যেখানে ছিল ১০২৩ ইউয়ান (১৪৫ মার্কিন ডলার), সেখানে এবছর জুনের শেষ তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৮০৯ ইউয়ান (১১৪ মার্কিন ডলার)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামীণ আয় কমার নেপথ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল, চিনের কৃষকদের হাতে জমির সত্ত্ব না থাকা। কমিউনিস্ট চিনে সমস্ত জমিই রাষ্ট্রের হাতে এবং তা কৃষি শ্রমিকদের ৩০ বছরের লিজ চুক্তির মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিন্তু সত্ত্বাধিকার না পাওয়ায়, কৃষকরা প্রয়োজনমতো সেই জমি বিক্রি করতে পারেন না।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে ওয়েনফেং জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার যেখানে যথার্থভাবেই কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছে, কিন্তু জমির সত্ত্বাধিকার না পাওয়ার ফলে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই জমির উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেঁচে থাকার খরচ। স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষাও কমিউনিস্ট চিনে আর বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ যোগান দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এই প্রেক্ষিতে চিনের জমি নীতির পুনর্বিবেচনা করারও সময় কি এসেছে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যদিও উদারনীতির প্রাথমিক সূত্র অনুসরণ করে, জমির বিকেন্দ্রীকরণ করলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? সেই প্রশ্নের উত্তর অমিল।
এই অবস্থায় দারিদ্র দূরীকরণের আবেদন জানানো শি জিনপিংয়ের আস্তিনের লুকোনো তাসের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি

 

Comments are closed.