প্রাক্তন সিআইডি অফিসার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন বাড়ির সর্বক্ষণের কাজের লোক চেয়ে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য কাজের এই বিজ্ঞাপনে প্রাক্তন গোয়েন্দা আধিকারিক জানিয়েছেন, কেবল কাজ করলেই হবে না, সঙ্গে করতে হবে সেবাও। এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কোন অর্থে সেবা চেয়েছেন প্রাক্তন এই পুলিশ কর্তা?
সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে সঠিক মানুষ চেনা যায়। কে কোন ভাষা কিংবা শব্দবন্ধ ব্যবহার করে নিজের চাহিদাকে বিজ্ঞাপিত করছেন, তা বিশ্লেষণ করলে বিজ্ঞাপনদাতা সম্পর্কে জানা যায় অনেককিছু। বিশেষ করে তাঁর মানসিকতা।
রবিবার বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকা সংবাদপত্রের সঙ্গে দেওয়া ‘ইত্যাদি’ নামের সাপ্লিমেন্টে একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে। তাতে ‘পরিষেবক’ সাব হেডিংয়ের তলায় এক অবসরপ্রাপ্ত সিআইডি অফিসার বাড়ির সব কাজের জন্য মহিলা চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এ পর্যন্ত পুরোটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চোখ কপালে ওঠার শুরু সেই বিজ্ঞাপনের পরের অংশে। যেখানে অবসরপ্রাপ্ত সিআইডি অফিসার লিখেছেন, বাড়ির সব কাজের জন্য প্রকৃত সুশ্রী, সব কাজ জানা বিশ্বাসী ও পরিশ্রমী, প্রকৃত পিছুটানহীন ২৪ ঘণ্টার মহিলা প্রয়োজন। এই কাজ কেবলমাত্র মহিলাদের জন্যই, পুরুষদের যোগাযোগ বারণ, তাও লিখেছেন বিজ্ঞাপনে। শেষে, বেতন ও আনুষঙ্গিক তথ্য জানানোর ঠিক আগের লাইনে প্রাক্তন সিআইডি অফিসার লিখেছেন, কাজের সঙ্গে ‘সেবা’ও করতে হবে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কোন সেবার কথা বলছেন তিনি?
সেবা কথাটির আভিধানিক অর্থ, শুশ্রুষা (রোগীর সেবা), পরিচর্চা (পদসেবা, গোসেবা, পতিসেবা), উপাসনা, পূজা (ঠাকুরসেবা), উপভোগ (ইন্দ্রিয়সেবা), কল্যাণ বা হিতসাধন (জনসেবা, সমাজসেবা), ভোজন, প্রণাম (সেবা দেওয়া)। কেমন তরো সেবা চাইছেন প্রাক্তন সিআইডি অফিসার?
সেবা কথাটি ঠিক কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন, তা জানতে আমরা বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু কেউ ফোন তোলেননি। ফলে জানা যায়নি প্রাক্তন সিআইডি অফিসার ঠিক কোন অর্থে সেবা চাইছেন।
কিন্তু চাকরি থেকে অবসর নেওয়া একজন সিআইডি অফিসার, ঘরের কাজের পাশাপাশি সেবায় পারদর্শী মহিলা চেয়ে যে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন, তা নজর কেড়েছে। গোয়েন্দা ব্যোমকেশ এমনই আপাত নিরীহ অথচ গভীর মর্মার্থযুক্ত বিজ্ঞাপনেই ‘খাঁটি খবর’ খুঁজে পেতেন। কাগজ খুলে আর পাঁচটা খবর বাদ দিয়ে গোগ্রাসে বিজ্ঞাপন গিলতেন। আর সহকারী অজিতকে বলতেন, সত্যিকারের খাঁটি খবর যদি পেতে চাও, তাহলে বিজ্ঞাপন পড়।গোয়েন্দা প্রবরের বক্তব্য ছিল বিজ্ঞাপনী পাতায় মজার মোড়কেই লুকিয়ে থাকে সবথেকে রোমাঞ্চকর খবরগুলো। যা থেকে সমাজ কোনপথে চলছে তার হদিশ মেলে। ১৯৩০ সাল নাগাদ শরদিন্দু ব্যানার্জির কলমে যা ছিল সত্য, আজ বদলে যাওয়া বাংলা তথা দেশেও তা একইরকম সত্যি। রবিবাসরীয় সংবাদপত্রের পাতায় এমন বিজ্ঞাপন কি সেই ইঙ্গিতই করছে না?
Comments are closed.