১০ হাজার মানুষকে নাগরিকত্ব দিয়ে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষের নাগরিকত্ব হরণের চালাকির নাম নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। বিজেপি সরকারের জন্য দেশের গণতন্ত্র বিপর্যস্ত, নাগরিকের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী মিছিলের সূচনায় এই মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব আইনের নামে আগুন নিয়ে খেলছে বিজেপি। তাঁর হুঁশিয়ারি, এই বিপজ্জনক খেলা খেলবেন না। সেই আগুনে নিজেরাও পুড়বেন। তাঁর কটাক্ষ, পেঁয়াজ জ্বলছে, আলু জ্বলছে, গ্রাম জ্বলছে, দেশ জ্বলছে। সেদিকে নজর নেই কেন্দ্রের সরকারের। তাই এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন, হিন্দুত্ব বিক্রির প্রয়াস চালাচ্ছে তারা।
মঙ্গলবার যাদবপুর এইট বি বাস স্ট্যান্ড থেকে ভবানীপুর যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। মিছিলের শুরুতে যাদবপুরে মমতা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর আমাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? যে আইন সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা কিছুতেই বাংলা প্রয়োগ করা যাবে না। মিছিলের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, প্রত্যেকে ‘নো ক্যাব, নো এনআরসি’ ব্যাজ পরে কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া আইন ও নীতির প্রতিবাদ করুন। তাঁর অভিযোগ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সম্পর্কে বিরোধীদের ঠিকমতো অবহিত না করেই সংসদে পেশ হয়। তাই তাঁর দলের অনেক সাংসদের অনুপস্থিতে এই বিল পাশ হয়েছে। এমন স্পর্শকাতর বিল দুপুর বেলা এনে মধ্যরাতে পাশ করিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কেন এই তাড়াহুড়ো, প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাঁরা পথে নামবেনই। ইতিমধ্যে বাংলার সঙ্গে বিভিন্ন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, নতুন নাগরিকত্ব আইন তারা কার্যকর করবে না। আগামী দিনে বিজেপি শাসিত রাজ্যও এই ‘নাগরিক বিরোধী’ আইনের বিরোধিতায় এগিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর। এদিনের মিছিলেও ব্যাপক ভিড় হয়। গোটা যাত্রাপথের দু’দিকে প্রচুর সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন মমতাকে দেখবেন বলে। অনেকে রাস্তার ধার থেকে মিছিলে ঢুকে যান।
মিছিল শেষে যদুবাবার বাজারে এক সভায় নেত্রী বলেন, ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১০ হাজার মানুষকে নাগরিকত্ব দিয়ে বাকিদের দেশ থেকে তাড়ানোর ফন্দির নাম নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। তিনি বলেন, একটা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতে কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করলেই যা ইচ্ছে তা করতে পারে না। বিজেপির নির্বাচনী স্লোগান সবকা সাথ, সবকা বিকাশ মনে করিয়ে মমতার কটাক্ষ, এ ভাবে বিভাজনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্র। এটা কী ধরনের বিকাশ? মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, বুধবারও কেন্দ্রের এই ‘অসাংবিধানিক’ আইনের বিরুদ্ধে হাওড়া ময়দান থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত হাঁটবেন তিনি। তাঁর প্রতিজ্ঞা, কিছুতেই বাংলায় নাগরিকত্ব আইন কিংবা এনআরসি করতে দেবেন না।
Comments are closed.