জেএনইউ হামলার পর পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আগেই কেন্দ্রের মন্ত্রী থেকে ডানপন্থী দল ও সংগঠনের রোষের শিকার হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আয়কারী অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা তাঁর সিনেমা বয়কটের ডাক দিয়েছেন, আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানতে চেয়েছেন দীপিকার রাজনৈতিক পরিচয়। জেএনইউ সফরের প্রেক্ষিতে কি এবার দীপিকা পাড়ুকোনের ব্র্যান্ড ভ্যালু-ও পড়তে চলেছে?
বিভিন্ন বিখ্যাত সংস্থার বিজ্ঞাপনী মুখ দীপিকা পাড়ুকোন। শোনা যাচ্ছে, অভিনেত্রীর জেএনইউ সফর নিয়ে যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে তার প্রভাব যাতে ব্যবসায় না পড়ে, তাই ‘স্বল্পমেয়াদে’ দীপিকার বিজ্ঞাপনগুলির দৃশ্যায়ন কম করা হয়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ড জানাচ্ছে, দীপিকা অভিনীত বিজ্ঞাপনগুলি স্বল্প সময়ের জন্য প্রচার বন্ধ রাখছে তারা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দীপিকার ছবি ‘ছপাক’ মুক্তির আগে তাঁর স্কিল ইন্ডিয়ার প্রচার ভিডিয়ো মুক্তি অজ্ঞাতকারণে বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ছপাক মুক্তির তিনদিন আগে গত ৭ জানুয়ারি দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রান্ত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে যান দীপিকা। সেখানে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি, দেননি ভাষণও। তাঁর উপস্থিতিই চক্ষুশূল হয়ে বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির। ‘দেশদ্রোহী’দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দীপিকার ছবি বয়কটের ডাক দেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। যদিও ছবি বয়কটের ডাকের পরেও প্রথম দু’দিনে ছপাকের বক্স অফিস কালেকশন হয় ১১.৬৭ কোটি টাকা। রবিবার প্রায় ৯ কোটি টাকা কালেকশন হয়েছে বলে খবর। সিনেমাটি বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। একটি মিডিয়া এজেন্সি সূত্রে খবর, কয়েকটি মাঝারি ব্যবসায়িক সংস্থা তাদের নির্দেশ দিয়েছে, অন্তত সপ্তাহ দুয়েক দীপিকা পাড়ুকোনের বিজ্ঞাপনী ছবি প্রকাশ বন্ধ রাখতে। এজেন্সির কথায়, বিতর্ক থিতিয়ে পড়লে ফের এই বিজ্ঞাপনগুলির প্রচার করা হবে।
ব্রিটানিয়া গুড ডে, ল’ওরিয়াল, তানিস্ক, ভিস্তারা এয়ারলাইনস, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো ২৩ টি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনী মুখ এবং কয়েকটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর দীপিকা। শোনা যায়, প্রতিটি ছবির জন্য ১০ কোটি এবং বিজ্ঞাপনী এনডোর্সমেন্টের জন্য ৮ কোটি টাকা নিয়ে থাকেন দীপকা। কিন্তু তাঁকে ঘিরে জেএনইউ বিতর্কের কারণে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি নিজেদের সরিয়ে নেবে কি না, তা নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত ওয়াকিবহাল মহল। কেউ কেউ বলছেন ব্যবসায়িক স্বার্থে কিছুদিনের জন্য তাঁর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধ রাখছে কয়েকটি সংস্থা। আবার কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন আমির খানের কথা। যিনি ‘অসহিষ্ণুতা’ নিয়ে মন্তব্য করে শাসকদলের কটাক্ষের শিকার হন। বিখ্যাত ই-কমার্স সংস্থা স্ন্যাপডিলও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাশাডর পদ থেকে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয় আমির খানকে।
সেলিব্রিটি ম্যানেজারদের মতে, কোনও ব্যবসায়িক সংস্থাই চায় না, তারা কোনও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে পড়ুক। তাই যখনই কোনও অভিনেতা বা মডেল কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থনে দাঁড়ান, তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখাকেই শ্রেয় বলে মনে করে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। কারণ তাদের ভয়, এর জন্য যেন প্রশাসনের কোপে পড়তে না হয়। সাধারণত বাণিজ্যিক ব্র্যান্ড সবসময়ে চায় নিরাপদে খেলতে। ব্যবসায়িক স্বার্থে যে কোনও বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ারই সর্বাত্মক চেষ্টা থাকে তাদের।
Comments are closed.