মঙ্গলবার দিল্লি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই রাতের দিকে চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। জানা গিয়েছিল এনআরসির ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে এনআরসি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। এরপরই বিষয়টি নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে কেন এমন হলো! ইচ্ছাকৃতভাবে সেই তথ্য সরিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ বলেন কোনও সাইবার অ্যাটাকের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এবার এই এনআরসি তথ্য উধাও হওয়ার ঘটনায় তথ্য সামনে এল। ভারতের অন্যতম প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রো, ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি করার নির্দেশ দেওয়ার পর, রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে এই কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত সহায়তা দেওয়ার চুক্তি হয় উইপ্রোর সঙ্গে সরকারের।
তথ্য উধাও হওয়ার ঘটনায় এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বকেয়া অর্থ না মেলায় চুক্তি নবীকরণ হয়নি। তাই সাময়িকভাবে ক্লাউড স্টোরেজ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এনআরসির। তথ্য হারিয়ে যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে উইপ্রোর চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ এর অক্টোবর মাস পর্যন্ত ওই চুক্তির বৈধতা ছিল। তারপর সেই চুক্তি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক তারপর সেই চুক্তি আর নবীকরণ করে নি। উইপ্রোর দাবি, অক্টোবরে সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরলেও ২০১৯ জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তারা সেই তথ্য ওয়েবসাইটে সরবরাহ করে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও সেই চুক্তি নবীকরণ না হওয়ায় এবং অর্থ না পাওয়ায় সাময়িকভাবে স্টোরেজ ক্লাউড থেকে সেই তথ্য সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে এনআরসি তালিকায় কাদের নাম আছে, কাদের নাম বাদ পড়েছে তা দেখা যেত।
উল্লেখ্য ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময়ে অসম এনআরসির তথ্য প্রকাশিত হয়। সেখানে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ যায় ১৯ লাখ মানুষের নাম। তালিকায় নাম ওঠে ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের। এরপরই বিষয়টি নিয়ে জাতীয় স্তরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধীরা চেপে ধরেন নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। দাবি ওঠে এনআরসিতে বহু বৈধ নাগরিকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন বেছে বেছে শুধু মুসলিম এবং বাঙালি হিন্দুদের টার্গেট করা হয়েছে। বেকায়দায় পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা শুধরে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গোটা দেশের সাথে ফের এনআরসি হবে অসমে। যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা নিয়ম মেনে ফের আবেদনের সুযোগ পাবেন।
Comments are closed.