লকডাউন কিছুটা শিথিল হয়ে বাস, ট্যাক্সির মতো গণপরিবহণ পরিষেবা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। এই অবস্থায় অফিস কিংবা কাছেপিঠে কোথাও প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেলই বাহন হয়ে উঠেছে বহু বাড়ির। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষজনের কাছে পড়ুয়াদের বিলি করা সাইকেল এখন নয়া যান। করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্কুল-কলেজে ছুটি চলছে। তাই ছাত্রছাত্রীদের সাইকেলের তেমন দরকার পড়ছে না। সে জায়গায় বাড়ির বড়রাই অফিস বা অন্য কোথাও যেতে হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেলের উপর ভরসা করছেন। বিভিন্ন জেলাতেই বাড়ির কচিকাঁচার সেই সাইকেল নিয়ে বড়রা কাজে রওনা দিচ্ছেন।
সবুজ সাথী প্রকল্পে বিগত কয়েক বছরে প্রতিটি জেলাতেই লক্ষাধিক সাইকেল বিতরণ করেছে রাজ্য সরকার। গত ৩ জুন ওয়ার্ল্ড বাই-সাইকেল ডে-তে এ নিয়ে ট্যুইট-ও করেন মমতা। তিনি লেখেন, পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার জন্য ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি সাইকেল বিলি করেছে তাঁর সরকার। এতে স্কুলছুটের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাস বা অন্য যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বেশ কঠিন। এদিকে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাস বা অন্যান্য ছোট যানে আক্রান্ত কেউ উঠছেন কিনা সেটা আগে থেকে তো কেউ বুঝতে পারবেন না। তাই সাইকেলকেই বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। এতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং যেমন মেনে চলা যাচ্ছে, পরিবহণে কোনও খরচ-ও নেই। বরং এতে শারীরিক কসরত হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচুর মানুষ সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল নিয়ে কাজে যাচ্ছেন। করোনার আগে লালবাগ বা বহরমপুর যারা ট্রেকারে বা টোটো চড়ে যেতেন। এখন তাঁরাই ছেলে বা মেয়ের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের স্কুল বা টিউশন বন্ধ থাকায় এখন তো তাদের সাইকেলের প্রয়োজন হচ্ছে না। কেউ জানাচ্ছেন, আগেও বাড়ির কচিকাঁচার স্কুল ছুটির পর তাদের সাইকেল চালিয়ে চাষ আবাদ দেখতে যেতেন, বাজারে যেতেন। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির জেরে সেই সাইকেলই যোগাযোগের প্রধান সঙ্গী হয়ে উঠেছে। অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, স্কুল খুলে গেলে একটা সাইকেল না কিনে উপায় নেই। এছাড়া বাইরে বেরিয়ে করোনার ঝুঁকি কমানোর অন্য কোনও রাস্তা নেই তাঁদের কাছে। প্রশাসনের দাবি, কোনও কোনও বাড়িতে দু-তিনটি করে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল রয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলির গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীরা বেশি উপকৃত হয়েছে। এদিকে এতদিন শহরের বহু পড়ুয়ার সাইকেল দরকার না হলেও করোনার দৌরাত্ম্যে বাড়িতে থাকা সেই বাহন অভিভাবকদের কাছে ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।
অটো বা টোটোতে না চড়ে শহরেরও অনেক সরকারি কর্মী সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সাথী প্রকল্প তাদের পরিবারের কাজেও আসছে।
Comments are closed.