‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ (Fair & Lovely) ক্রিম থেকে বাদ যাচ্ছে ‘ফেয়ার’ বা ফরসা শব্দটি। বৃহস্পতিবার ঘোষণা করল হিন্দুস্তান ইউনিলিভার।
হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান সঞ্জীব মেহতা বলেন, স্কিন কেয়ার পণ্যগুলিকে অন্যভাবে উপস্থাপিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঠিক একই কথা উল্লেখ করে এদিন হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের অফিশিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়, ‘ফেয়ারনেস’, ‘হোয়াইটনিং’ এবং ‘লাইটনিং’ এর মতো শব্দ আমাদের সমস্ত প্রসাধনী পণ্য থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র ব্র্যান্ড নেমও পরিবর্তন করা হচ্ছে।
দু’সপ্তাহের মধ্যে ত্বক ফর্সা করে দেওয়ার দাবি নিয়ে বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ফেয়ারনেস ক্রিম। এই সমস্ত ক্রিম নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ আন্দোলন। এই বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম অভিযোগ ওঠে বাজার চলতি বিভিন্ন ফেয়ারনেস ক্রিম নিয়ে। পৃথিবীতে যখন তোলপাড় শুরু করেছে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন, তখন কেতাবী সৌন্দর্যে ফরসা হওয়ার প্রবণতা এক কথায় বর্ণবিদ্বেষমূলক উস্কানি বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, শুধু নাম পাল্টে ফেললেই হবে না, বদলাতে হবে বাণিজ্যিকরণ, বিজ্ঞাপনের ভাষাও। এগুলি পরোক্ষভাবে কালো ত্বকের মানুষের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
এই প্রেক্ষিতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার তাদের অন্যতম প্রসাধনী পণ্য ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ থেকে ‘ফেয়ার’ শব্দটি ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল।
সংস্থার তরফে বলা হয়েছে তারা সব ত্বকের মানুষকে সম্মান জানিয়ে প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন করে। হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৯ সালে বিজ্ঞাপনী প্রচারেও আমরা বিভিন্ন বদল এনেছিলাম। বিভিন্ন ক্রেতার প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এবার ‘ফেয়ার’ শব্দ বাদ দেওয়া হচ্ছে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ক্রিম থেকে। এখন রেগুলেটরি অনুমোদনের অপেক্ষা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন নামে আসতে চলেছে এই ক্রিম। একইভাবে L’Oréal সংস্থাও তাদের প্রসাধণী পণ্য থেকে ‘ফেয়ারনেস’ এর মতো শব্দ সরিয়ে ফেলছে বলে সূত্রের খবর। জনসন অ্যান্ড জনসন সংস্থা জানিয়েছে তারা আগামী এক মাস ‘ফেয়ারনেস’ ক্রিমের বিক্রি বন্ধ রাখছে।
এদিকে যোগগুরু রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি করোনার ‘আয়ুর্বেদিক প্রতিষেধক’ বাজারে এনে চর্চার কেন্দ্রে। করোনিল নামে ওই ওষুধে ৭ দিনেই করোনা সেরে যাবে বলে করেন রামদেব৷ এরপরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশজুড়ে৷ অনেকের অভিযোগ, বছরের পর বছর ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র মতো ক্রিম যখন দু’সপ্তাহে ফরসা করে দেওয়ার মিথ্যে বাণিজ্যিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার ও বিক্রি হয়, সে ক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ করা হয় না। সেটাও কি ক্রেতাদের প্রতারণা নয়? প্রশ্ন তোলেন কিছু নেটিজেন। এই প্রেক্ষিতেই ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি-র নাম পরিবর্তনের ঘোষণা করল হিন্দুস্তান ইউনিলিভার।
Comments are closed.