১১৯ টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের দলিল দেওয়ার কাজ শুরু করছে মমতা ব্যানার্জি প্রশাসন, উপকৃত হবেন ৩ লক্ষ মানুষ
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের দিকে চোখ রেখে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। ডিজিটাল সভা থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ ফের উসকে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এবার প্রতিশ্রুতিমাফিক বাংলার উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের জন্য কাজ শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন শুরুর আগেই তিনি বাংলায় ছড়িয়ে থাকা ১১৯টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতো কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউন পর্বে তা থমকে যায়। লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল হতেই সরকারি আধিকারিকদের এই বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের দলিল দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলা হয়েছে, আগামী অগাস্ট মাসেই এই কাজ শেষ করতে হবে। অর্থাৎ, এই ব্যবস্থা কার্যকরী হলে আগামী এক মাসের মধ্যে এক লক্ষেরও বেশি উদ্বাস্তু মানুষ স্থায়ী ঠিকানা পাবেন। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের রেল, বন্দর সহ আরও কয়েকটি মন্ত্রকের জমিতে এই কলোনিগুলি রয়েছে। সবক’টিই প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কলোনি থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সেই জটিলতার মধ্যে এই নিঃশর্ত দলিল উদ্বাস্তুদের ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই’কে সরকারি স্বীকৃতি দেবে।
এর আগেও ৯৪ টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের নিঃশর্ত দলিল দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত করেছেন মমতা। সেগুলি মূলত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের জমিতে গড়ে উঠেছে।
সিএএ নিয়ে বিজেপির প্রচারের মধ্যে গত মার্চ মাসে উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে এক জনসভায় আরও ১১৯ টি উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আইন এবং উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের টিম গঠন করে কাজ শুরু হয়। কলোনিগুলির বাসিন্দাদের পরিবার পিছু জমির মাপ নিয়ে সমীক্ষাও আরম্ভ করেন আধিকারিকরা। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই কাজ থমকে যায়। তবে আনলক-১ পর্ব থেকে ফের শুরু হয়েছে জমির মাপজোক। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে শেষ করতে হবে কাজ। আগে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করে কলোনির বাসিন্দাদের ‘টাইটেল ডিড’প্রদান করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সময়সীমা আরও একমাস এগিয়ে আনা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই কাজ শেষ হলে রাজ্যের মোট ২৩৭ টি কলোনির মধ্যে ২১৩টির বাসিন্দাদের স্থায়ী ঠিকানা এবং নাগরিক হিসেবে যাবতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। বাকি ২৪ টি কলোনিতেও একই পদ্ধতিতে কাজ হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। সেই সমস্যা মিটিয়ে বাসিন্দাদের টাইটেল ডিড দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর এবং কোচবিহার জেলা মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ উদ্বাস্তু পরিবারকে নাগরিকত্বের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে মমতা ব্যানার্জির সরকার।
Comments are closed.