২২ ফেব্রুয়ারি। লন্ডনে জুলিয়ান আসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে একজোট হয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা। ছিলেন আসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে বিশ্বে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সমাজকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ। মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন পিঙ্ক ফ্লয়েড খ্যাত রজার ওয়াটার্স। আর সেই দিনই তৈরি হয়েছিল এক অনন্য ইতিহাস। এক সূত্রে গাঁথা পড়েছিল ভারতের সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ ও আসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন।
লন্ডনের প্রতিবাদ মঞ্চে রজারের উচ্চারণে মূর্ত রূপ পেয়েছিল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়া আমির আজিজের কবিতা, ‘সব ইয়াদ রাকখা যায়েগা’। দুনিয়ার কোণে কোণে পুঁজিবাদী অর্থনীতির করাল থাবা নিয়ে সেদিন সতর্ক করেছিলেন রজার। এবার আল জাজিরার নেওয়া ইন্টারভিউতে সেই বিরোধিতার নয়া স্বর উচ্চারিত হল পিঙ্ক ফ্লয়েডের কিংবদন্তির মুখে। বললেন, উদার অর্থনীতি বা নিওলিবারল অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের জেরেই আমরা ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছি। বস্তুত এভাবে আমাদের ভিতর থেকে দুর্বল করাই এই নীতির একমাত্র লক্ষ্য।
আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন থেকে প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের আগ্রাসন, ক্রিমিয়া সঙ্কট ও রাশিয়া এবং অতি অবশ্যই এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতির চালিকাশক্তি, নিওলিবারল অর্থনৈতিক ডিজাইন নিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করলেন রজার ওয়াটার্স। বললেন, ইংল্যান্ডে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের ভুল পদক্ষেপ নিয়ে। জানালেন, ট্রাম্প সরলে বিডেন আসবেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে তাতে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা জো বিডেন, রজার ওয়াটার্সের মতে এঁরা সবাই আসলে উদার অর্থনীতির মডেলের এক একজন পুতুল মাত্র।
ইংল্যান্ডের ভোটে লেবার পার্টির মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন প্রোপাগান্ডাকে। বলেন, করবিন ইহুদি বিরোধী, এই মতবাদ কৌশলে প্রচার করে দিল সংবাদমাধ্যম। সেই চাপ মোকাবিলা করতেই পারল না লেবার পার্টি। রজার ওয়াটার্সের মতে, গোটা দুনিয়ার দিকে তাকালে বোঝা যায়, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মূলত ২-৩ জন প্রবল প্রতাপশালী এবং ধনকুবেরের ড্রয়িংরুম থেকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলছেন, জেফ বেজোসের কথা। যিনি ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক। রজারের প্রশ্ন, আপনি কি বিশ্বাস করেন, নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে স্রেফ জার্নালিস্টিক এথিকসে ভর করে এডিটোরিয়াল নীতি স্থির করছেন বেজোস? রুপার্ট মার্ডকরা কী উদাহরণ তৈরি করেছেন? রজার ওয়াটার্সের মতে এটাই নিওলিবারল অর্থনৈতিক নীতির ডালপালা। এই ডালপালার মাধ্যমেই নিওলিবারলিজম দুনিয়াকে শাসন করছে। কিন্তু এর বিরোধিতা কি নেই? এবার হাসি ফোটে রজারের মুখে। আছে তো, আমেরিকায় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন আসলে কোন অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ? গোটা বিশ্বেই কি এমন সোচ্চার বিরোধিতা আমরা দেখছি না?
আসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে লন্ডনের সমাবেশে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে। মোদী সরকারকে সরাসরি ফ্যাসিস্ট বলতেও বাদ রাখেননি। আল জাজিরার ইন্টারভিউতে ভারতের নাম উচ্চারণ না করলেও, সেদিনের বক্তব্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ইন্টারভিউয়ের যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, রজার আসলে নিওলিবারেল অর্থনীতির ক্রমাগত ডালপালা মেলার বিরোধিতা করছেন। বিশ্বের যেখানে এই পরিস্থিতি প্রকট, রজার ওয়াটার্সের বলিষ্ঠ কণ্ঠ সেখানেই প্রতিবাদের গান গেয়ে উঠেছে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা থেকে শুরু করে ইজরায়েল, রাশিয়া কিংবা ভারত, সর্বত্রই নিও লিবারেল অর্থনীতির অন্ধ আগ্রাসনে যখন জনজীবন ব্যতিব্যস্ত, ঠিক তখনই ফের একবার গর্জে উঠলেন রজার ওয়াটার্স।
Comments are closed.