বাংলাদেশের ছবিকে কলকাতার দাবি করে ফেক ট্যুইট! কে এই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান তারেক ফাতেহ, যাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়িয়ে বিতর্কে জড়ালেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান লেখক তারেক ফাতেহ। বছর তিনেক আগেকার বাংলাদেশের একটি ভিডিও বর্তমান কলকাতার বলে দাবি করে ট্যুইট করেন তিনি।
ধর্মীয় উস্কানিমূলক ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটা রাস্তা দিয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা হেঁটে চলেছেন। সঙ্গে মাইকে বাজছে ‘ইসলাম জিন্দাবাদ’। তাতে গলা মেলাচ্ছেন সবাই। সেই ভিডিও শেয়ার করে তারেকের ট্যুইটারে লেখেন, মমতা ব্যানার্জি শাসিত বাংলায়, কলকাতার কিছু ধর্মোন্মাদরা রাজপথের দখল নিয়েছে।
যদিও এই ভিডিওটি ফেক বলে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তারেকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
পরে অবশ্য তারেক ফাতেহ ফেক টুইটটি ডিলিট করে দেন। কিন্তু গত শুক্রবার আপলোড করা এই ভিডিওটি কয়েক লক্ষ নেটিজেন দেখেছেন। অনেকে এই ভিডিওটিকে সত্যি বলে মনে করে কমেন্টও করেছেন।
কিন্তু কে এই তারেক ফাতেহ? কলকাতা বা ভারত নিয়ে কেনই বা তাঁর আগ্রহ?
বাংলাদেশের ভিডিওকে কলকাতার বলে দাবি করার মতো ভুয়ো খবর ছড়ানোর কাজ এই প্রথমবার নয়, এর আগেও বহুবার ভুয়ো ভিডিও ও ছবি ট্যুইট করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তারেক ফাতেহ। বিশেষত ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়ানোর চেষ্টা তারেকের ট্যুইট থেকে বারবার লক্ষ্য করা গিয়েছে। পাকিস্তানি-কানাডিয়ান লেখক তারেক ফাতেহ শারিয়া আইনের বিরোধী এবং নিজেকে ইসলামের উদার ও প্রগতিশীল অংশের বলে দাবি করে থাকেন। তিনি নিজেকে সাংবাদিক বলেও পরিচয় দেন।
শোনা যায়, দেশভাগের সময় তৎকালীন বম্বে থেকে তারেকের পরিবার পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। তারেকের বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা করাচিতে। তাঁর দাবি, তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন করাচি সান সংবাদমাধ্যমে। বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘৬০ ও ‘৭০ এর দশকে দু’বার তাঁকে জেলে ঢোকানো হয়। জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে সৌদি আরব এবং ‘৮০-র দশকে কানাডা গিয়ে থিতু হন তারেক।
‘চেজিং আ মিরেজ’, ‘দ্য জিউ ইজ নট মাই এনিমি’ নামে বেশকিছু বই লিখেছেন তিনি। ভারতে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে মুসলিম মহিলাদের রাস্তায় নামা নিয়ে তারেক দাবি করেন, কিছু রাজনৈতিক দলের থেকে টাকা নিয়ে ভণ্ডামি চলছে। তাঁর দাবি শাহিনবাগে মুসলিম মহিলারা NRC, CAA এর বিরোধিতা করছেন না।
২০১৭ সালে একবার তাঁকে খুনের ছক কষার দায়ে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছিল এ দেশের পুলিশ। মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ছোটা শাকিল তাঁকে খুন করার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি ছিল তাঁর।
এদিকে একাধিকবার ভুয়ো খবর ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে মনগড়া গল্প কাহিনি বলার জন্য বহুবার সমালোচিত হয়েছেন তারেক। ঠিক এবার যেমন বাংলাদেশের ভিডিওকে কলকাতার বলে দাবি করে বসেছিলেন তারেক ফাতেহ। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে কলকাতায় এই বিতর্কিত ব্যক্তির অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। সে সময় তারেক মন্তব্য করেছিলেন, মমতা ব্যানার্জি আসলে পাক বিরোধী কথা শুনতে চান না। তাই সভার অনুমতি দেননি।
Comments are closed.