অমর্ত্য সেনকে জুতো ছোঁড়ার মিম শেয়ার বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের! লিখলেন, ‘Appropriate’, তীব্র নিন্দা, সমালোচনা
অমর্ত্য সেনের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারা হচ্ছে। বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর মিম শেয়ার করলেন বিজেপির তথাগত রায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আগেও বেশ কয়েকবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে কটাক্ষ, সমালোচনা করেছেন তথাগত রায়। তবে মেঘালয়ের রাজ্যপালের পদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া তথাগতের এবারের ট্যুইটের শালীনতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অমর্ত্য সেনের দিকে জুতো ছোঁড়ার মতো কুরুচিকর মিম নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে রিট্যুইট করে তথাগত লিখেছেন ‘যথাযথ’।
রবিবার জয় শ্রীরাম নামে একটি ট্যুইটার হ্যান্ডেলের শেয়ার করা কুরুচিকর মিমকে নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে রিট্যুইট করেন তথাগত। তাতে লেখা হয়েছে, ভারতে পাবজি গেম নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশের অর্থনীতি আরও ধ্বংসের দিকে যাবে। দাবি করা হয়, এই মন্তব্যটি করেছেন অমর্ত্য সেন! সেই লেখার নীচে দেখা যাচ্ছে, একজন জুতো হাতে নিয়ে তা ছুঁড়তে উদ্যত হয়েছে। এই কুরুচিকর ট্যুইটটি রিট্যুইট করে তথাগত ক্যাপশনে লিখেছেন ‘Appropriate’ (যথাযথ)।
অথচ ভারতে পাবজি নিষিদ্ধ করা নিয়ে অমর্ত্য সেন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, এমন কোনও খবরই নেই।
আগে বহুবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে কটাক্ষ করেছেন তথাগত। কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফরোয়ার্ড মেসেজ শেয়ার করেছিলেন তিনি। যেখানে লেখা ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে অমর্ত্য সেন বা অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি নন, দেশের অর্থনীতি বাঁচাচ্ছেন মাতালরা।
এর আগে গত বছর জুলাইয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে অর্মত্য সেন বলেছিলেন, জয় শ্রীরাম ধ্বনি এখন মানুষকে মারধর করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধ্বনির সঙ্গে, বাংলার সংস্কৃতির কোনও যোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন অর্থনীতিবিদ। যার প্রেক্ষিতে তথাগত ট্যুইটারে লিখেছিলেন ‘অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। রাজনীতিতে নয়। তাই তাঁর উচিত নিজের বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। রাজনীতি নিয়ে যত কম বলবেন ততই মঙ্গল।’বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে রামের যোগ বোঝাতে গিয়ে তথাগতের তোপ ছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের রামরাজাতলা এবং শ্রীরামপুর নামে কি রাম শব্দ নেই? ভয় পেলে তো আমরা রাম নামই স্মরণ করি। এভাবেই রাম শব্দ বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ তারপরেই অমর্ত্য সেনকে কটাক্ষ করে লেখেন, যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, তাঁর উচিত সেই বিষয় নিয়ে মুখ খোলা। রাজনীতি নিয়ে নয়।
পড়ুন: মমতা ব্যানার্জিকে আক্রমণে এবার ধনখড়ের দোসর তথাগত রায়
বছরখানেক আগে রাজ্য রাজনীতিতে এ নিয়ে বেশ শোরগোলও হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে করা অমর্ত্য সেনের ভাষণের সমর্থনে তাঁর ছবি দিয়ে রাজ্যে পোস্টার পড়েছিল। তৃণমূল ও বামেরা সরাসরি সেই মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে আসে। অপর্ণা সেন, আদুর গোপালকৃষ্ণণ, রামচন্দ্র গুহ, শাম বেনেগালের মতো বিদ্বজ্জ্বনেরাও জয় শ্রীরাম ধ্বনিকে যুদ্ধ হুংকার হিসেবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ব্যবহার করছে, এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন।
পড়ুন: জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তরা বাংলাদেশ ছেড়ে শ্যামাপ্রসাদের তৈরি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন!
এদিকে সদ্য রাজ্যপালের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া এবং ‘২১ এর বিধানসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপির অন্যতম মুখ বলে নিজেকে দাবি করা তথাগত রায় একজন বিশিষ্ট বাঙালি ব্যক্তিত্বকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন তার তীব্র নিন্দা হচ্ছে।
পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে থেকে ইস্টবেঙ্গলকে সমর্থন কেন, বিতর্কিত ট্যুইট করে ক্ষমা চাইলেন তথাগত রায়
এর আগেও একাধিকবার ফেক নিউজ শেয়ার করেছেন তথাগত বলে অভিযোগ। অভিজিৎ বিনায়ক বা অমর্ত্য সেন, মমতা ব্যানার্জি, জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্ত কিংবা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, নিজের রাজনৈতিক মত যেখানেই বাধা পেয়েছে, আক্রমণে পিছপা হননি মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। এমনকী তা করতে গিয়ে কখনও কখনও ফেক নিউজ শেয়ার করে ফেলেন তিনি। তার নবতম দৃষ্টান্ত পাবজি বিতর্ক।
Comments are closed.