অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাকরি ক্ষেত্রে শীর্ষ পদে পুরুষদের যে আধিক্য, তা সকলেরই জানা। কিন্তু জানেন কি, তরুণ-তরুণীরা যখন চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন, তখন উচ্চ পদে যাওয়ার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং মেধায় তরুণীরা অনেক এগিয়ে থাকেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে পড়েন লড়াইয়ে। এই তথ্যই উঠে এল তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরতদের নিয়ে করা এক সমীক্ষায়। কিন্তু জানেন এর কারণ?
SCIKEY নামক এক মার্কেটপ্লেস নেটওয়ার্ক তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রতি ১০ জনে মাত্র ৩ জন মহিলা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সৃষ্টিশীল ভাবনাকে পুঁজি করে চাকরি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারেন। সেখানে প্রতি ১০ জন পুরুষে সংখ্যাটা ৭ জন। কিন্তু চাকরি শুরুর সময় আদতেই ব্যাপারটা এরকম থাকে না। বরং ব্যাপারটা থাকে একেবারেই উল্টো।
‘Women in the IT sector in India’ শীর্ষক সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে SCIKEY ২২ থেকে ৪৭ বছর বয়স্ক ৫,৩৮৮ জন তথ্য প্রযুক্তি কর্মীর মধ্যে সার্ভে চালিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শতকরা ৬০ জন মহিলা এবং শতকরা ৪০ জন পুরুষ কেরিয়ারের শুরুতে বড়ো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সৃষ্টিশীল ভাবনার অধিকারি হন। স্বভাবতই এই ধারা বজায় থাকলে কর্পোরেটের উচ্চ পদে মহিলাদের সংখ্যা কম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর কেরিয়ারের পরবর্তী পর্যায়ে তরুণীদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ। এখন প্রশ্ন হল কেন এমন হয়?
SCIKEY র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরির যোগ্যতা নির্ণায়ক প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মধ্যে দক্ষতার ফারাক প্রায় নেই বললেই চলে। তথ্য পরিসংখ্যান নির্ভর কাজে পুরুষের স্কোর যদি হয় ১.৭১ শতাংশ তাহলে মহিলারা ১.৬ শতাংশ। সৃষ্টিশীল ভাবনার ক্ষেত্রে মহিলা-পুরুষ দু’জনই ৩.৪১ শতাংশ। টেকনিক্যাল কাজের দক্ষতায় পুরুষ ২.১৯ শতাংশ, মহিলা ২.৪১ শতাংশ।
অর্থাৎ, প্রতিটি ক্ষেত্রে সমদক্ষতা থাকা সত্ত্বেও উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম। SCIKEY সহ প্রতিষ্ঠাতা করুণজিৎ ধির বলছেন, এই ধাঁধার উত্তর লুকিয়ে ভারতের পুরুষতান্ত্রিকতার ঐতিহ্যের মধ্যে। চাকরি পরিসরে সমদক্ষতার নারী-পুরুষে ফারাক হওয়ার কথা নয়, কিন্তু আমাদের বহু প্রজন্মের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তা বরদাস্ত করতে পারে না। যতদিন না আমরা এই মিথ্যের দুনিয়া ছেড়ে বেরোতে পারব, লিঙ্গ বৈষম্যের সমাধান অধরাই থাকবে। আমার মনে হয় এখন সেই সময় এসেছে, বলেন করুণজিৎ ধির।
Comments are closed.