করোনাকালে বন্ধ উটি, বেঙ্গালুরু সহ দক্ষিণ ভারতের একধিক দুর্গা পুজো, মন খারাপ প্রবাসী বাঙালিদের

পৃথিবীজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো অতিমারি করোনার আবহে এই বছর হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অনেক রাজ্যে বাঙালিদের উদ্যোগে চলা বিভিন্ন দুর্গা পুজো।  তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলার একটি মাত্র দুর্গা পুজো নীলগিরি সার্বজনীন দুর্গোৎসব।

নীলগিরি পাহাড়ের বুক চিড়ে চলা টয় ট্রেন, সবুজ চা বাগান, মনোরোম জলবায়ুর আকর্ষণে প্রতি বছর পুজোর ছুটিকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তে কাটাতে এই জেলার শৈল শহর উটিতে ভিড় করেন বহু বাঙালি এবং তখন তাঁদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে পাহাড়ের বুকে দীর্ঘ ৫৯ বছর ধরে হয়ে চলা এই দুর্গা পুজো। যেখানে পাহাড় ভ্রমণের সাথে অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারতেন তাঁরা নিশ্চিন্তে I কিন্তু এবার বাধ সাধলো করোনাI দুর্গোৎসব কমিটির সেক্রেটারি অসিত তরফদারের কথায়, অনেকভাবে চেষ্টা করেও কিছুতেই করা গেল না I প্রথমত, অনুমতি একটি বড়ো সমস্যা। প্রশাসনের তরফ থেকে ৫০ জনের বেশি লোক সমাগম অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। যদি আনুষঙ্গিক সকল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে শুধু পুজো করা হয়, তাহলেও যা ভিড় হয় তা এড়ানো বা সামলানো কষ্টসাধ্যI দ্বিতীয়ত, বেশ কয়েক মাস ধরে বহু দোকান, বাজার, বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করতে হয় অনুদান, যা এই বছর করোনা পরিস্থিতে সম্ভব হয়নি এবং বর্তমানের  অর্থনৈতিক সংকটও বাধা হয় দাঁড়াচ্ছে অনুদানদাতাদের কাছেওI তৃতীয়ত ও মূলত, আশপাশের বেঙ্গালুরু, মাইসোর, কোয়েম্বাটোরের মতো বড়ো শহরগুলিতে পুজো না হওয়ায় বহু বাঙালি এই পুজো দেখতে চলে আসতে পারতেন I অসিতবাবুর কথায়, একবার কোনও কারণে এই সময়ে দুর্গা পুজো আয়োজন করতে গিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়ে কোনও অঘটন হলে আর কোনওদিন অনুমতি পেতাম না।

আর একটি কারণ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকি বা পুরোহিত, কারোর পক্ষেই যাওয়া সম্ভব নয়, গেলে খরচ বেড়ে যেত অনেকI তাই মনের মধ্যে কষ্ট চেপে উদ্যোক্তারা আশার আলো দেখছেন আগামী বছরের পথ চেয়ে। কারণ, আগামী বছর তাদের হীরক জয়ন্তী বর্ষ, পরিকল্পনায় আছে অনেক নতুনত্বI আরেকটি সান্ত্বনা ফান্ডের একটি অংশ তারা ভাগ করে দিচ্ছেন পুজোর সাথে জড়িত প্রতিমা শিল্পী, পুরোহিত এবং একটি যুবককে, যাঁর চিকিৎসার জন্যI

একইভাবে হচ্ছে না আর এক দক্ষিণী শহর কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন পুজোI ইলেকট্রনিক সিটিতে বাস করা বহু বাঙালির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গা পুজোগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম হল সাউথ বেঙ্গালুরু কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোI তারা এবছর করছেন ঘট পুজো, তাও কেবলমাত্র নবমীর দিন। ২৪  বছর ধরে চলা এই পুজোয় এই প্রথমবার থাকছে শুধুমাত্র সদস্যদের ঢোকার  অনুমতি। থাকছে না নানান অনুষ্ঠানের কর্মসূচি, মেনে চলতে হচ্ছে এই একদিনের ঘট পুজোর জন্য কর্ণাটক সরকারের অজস্র নিয়মবিধি। যেমন, প্রবেশকারীদের নাম, ফোন নম্বর রেজিস্টার করতে হবে, থাকবে থার্মাল গান এবং স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থাI তাঁরা ব্যবস্থা  করেছেন কুড়ি জনের এক একটি ব্যাচ। প্রতিটি ব্যাচের জন্য বরাদ্দ থাকবে নির্দিষ্ট টাইম স্লট ও নির্দিষ্ট জায়গাI থাকছে না পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা, পুষ্পাঞ্জলি, শান্তির জলI পুজো কমিটির সহসভাপতি সুমন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, আমরা এই পুজো কমিটির পক্ষ থেকে  ৮০০  শ্রমিকের হাতে তুলে দিয়েছি খাবার। পাঠিয়েছি আমপান ত্রাণ তহবিলে দেড় লক্ষ টাকা এবং একটি অনাথ আশ্রমে দুইটি বাচ্চার  খরচ I আর একটি পুজো কমিটি সারথি সোসিও-কালচারাল ট্রাস্ট-এরও বক্তব্য একইI

প্রাথমিকভাবে বেঙ্গালুরু পৌর নিগম অনুমতি দেয়নি পুজো আয়োজনের এবং গত ১৬ অক্টোবর তারা একটি অনুমতিপত্র পান। কিন্তু এত অল্প সময়ে পুজোর আয়োজন সম্ভব নয়। উদ্যোক্তা শ্বেতা চ্যাটার্জির কথায়, প্রতি বছর লাখ খানেক লোকের আগমন হয় এখানে। গত বছর অনুপম রায়ের অনুষ্ঠান দেখতে তিন লাখ লোক সমাগম হয়েছিল। এবছর সম্পূর্ণ বন্ধ পুজো এবং অনুষ্ঠানI তাঁরাও টাকা দান করে দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুদানমূলক কাজেI কমবেশি সবার গলাতেই এক সুর, এই বছর স্থগিত থাক দুর্গা পুজোর সকল আয়োজন, ব্যয় হোক অর্থ অন্য কোনও ভালো কাজে I

 

 

 

Comments are closed.