‘একতরফাভাবে বিজেপির প্রচার করেন, সারাদিন ওদের দেখিয়ে যান। আমাদের তো জায়গাও জোটে না।’ এভাবেই মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগকে বড় গুরুত্ব দিয়ে খবর পরিবেশন করে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম। কিন্তু রাজ্যের উত্তর মানুষকে জানানো হয় না। মমতার কথায়, ‘কারও কমপ্লেন দেখালে রিপ্লাইও দেখাতে হবে। এটা কম্পালসরি, এটাই সৌজন্য। ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিজেপির হ-জ-ব-র-ল খবরও প্রতি আধঘন্টাই প্রচার করা হয়, তাঁর দলের কথাকে গুরুত্বও দেওয়া হয় না।
এবারের বাংলা সফরে এসে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যার উত্তর দিতেই এদিনের সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। অমিত শাহকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, হোম মিনিস্টারের অনেক কিছু ঢেলে প্রচার করেছেন কিন্তু তাঁদের জেনে বলা উচিত। বাংলাকে তিনি দুঃস্বপ্নের নগর বলেছেন। কিন্তু ১১ বছর আগে কোথায় ছিলেন? এখন ঝকঝকে বাংলা দেখে ঈর্ষায় এসব প্রচার করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, কেন্দ্রের তথ্য বলছে, দারিদ্র দূরিকরণ, ১০০ দিনের কাজ, বাংলার আবাস যোজনা, গ্রামীণ রাস্তা তৈরি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, মাইনোরিটি ডেভেলপমেন্টে আমরা একনম্বর। কেন্দ্রের তথ্য সত্য নাকি ওনার তথ্য সত্য? প্রশ্ন মমতার। তিনি আরও বলেন, বাংলার অর্থনীতি নিয়েও বড় বড় কথা বলেছেন অমিত শাহ। আমি ভালো ইকোনমিক্স বুঝি না। উনি বোঝেন তো?
প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা করেছেন অমিত শাহ। বাংলার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেছেন। এর উত্তরে মমতা জানান, যেখানে দেশের জিডিপি ৩.৮৯ শতাংশ, বাংলার আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৩৯ শতাংশ।
রাজ্যের আইন- শৃঙ্খলা নিয়েও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগের উত্তরে কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন গত ১০ বছরে বাংলায় রাজনৈতিক খুন কমে গিয়েছে। এখন পারিবারিক বিরোধে মৃত্যুকেও রাজনৈতিক মৃত্যু বলে অভিযোগ করছে বিজেপি। পাহাড় শান্ত, জঙ্গলমহল শান্ত। ৩৮৩ জন মাওবাদী নেতা সারেন্ডার করেছে সরকারের কাছে। তাঁদের মধ্যে ৩৭৪ জনকে হোমগার্ডের চাকরি দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত সাতবছরে বাংলায় একটিও মাওবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি এ রাজ্যে, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। এরপর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলার উন্নয়ন, বাজেট বৃদ্ধি, ডাক্তারি কলেজের সংখ্যার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বাংলায় হাসপাতালে বেড সংখ্যা হয়েছে ৮৫ হাজার। বাজেট ৩ হাজার ৪৮৪ থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। স্কুলছুট কমেছে। খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, সবুজশ্রী ইত্যাদি রাজ্য সরকারের প্রকল্পের তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
অমিত শাহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মমতা ব্যানার্জির প্রত্যুত্তর, ‘চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক কে ঠিক কে ভুল। স্টেট জিডিপিতে ১৬ নম্বরে নয় দু’নম্বরে রয়েছে বাংলা। বিদেশি বিনিয়োগ আগে যেখানে ছিল ০.২২ শতাংশ তা হয়েছে ১.৬২ শতাংশ।
একের পর এক তথ্য তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে মমতার তোপ, এতকিছু বললাম, লিখবেন না কিছু জানি, তাও জানালাম। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগের উত্তর দিয়ে মমতার কটাক্ষ, সব উত্তর দেওয়ার জন্য অমিত শাহের উচিত আমাকে গুজরাতি খাবার খাওয়ানো।
Comments are closed.