ত্রিপুরায় সিপিএম মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’ বন্ধ করে দিল রাজ্য সরকার। ১ অক্টোবর, সোমবার রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসক সন্দীপ এন মাহাত্মে ‘ডেইলি দেশের কথা’ কর্তৃপক্ষকে আর কাগজ প্রকাশ না করার নির্দেশ দেন। সেই সময় ২ রা অক্টোবরের কাগজ ছাপার কাজ পুরোদমে চলছিল। জেলা শাসকের নির্দেশের জেরে মঙ্গলবার আর কাগজ প্রকাশিত হয়নি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিজেপি সরকার বিরোধী দলের এই মুখপত্র বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের স্বরূপ উন্মোচনের যে কাজ ‘ডেইলি দেশের কথা’ নির্ভীকভাবে করছিল, তা ঠেকাতেই গণতন্ত্রের ওপর এই আঘাত হানা হয়েছে। বুধবারই কাগজ বন্ধের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিএম।
সূত্রের খবর, ‘ডেইলি দেশের কথা’র সম্পাদকের নাম এবং মালিকানা সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে ত্রিপুরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯৭৯ সালের ১৫ ই অগাস্ট ত্রিপুরায় সিপিএম মুখপত্র ‘ডেইলি দেশের কথা’ চালু হয়েছিল। সেই সময় কাগজের মালিকানা ছিল সিপিএমের। প্রথম সম্পাদক ছিলেন পার্টির নেতা গৌতম দাশ। ২০১২ সালে পার্টির মালিকানা বদল করে সোসাইটি তৈরি করা হয় এবং সেই সোসাইটি কাগজ পরিচালনা করতে শুরু করে। যদিও মালিকানা পরিবর্তন হয়ে সোসাইটি তৈরি হয়, কিন্তু গৌতম দাশই সম্পাদক থেকে যান। ২০১৫ সালে কাগজকে একটি ট্রাস্টের আওয়ায় আনা হয় এবং ডেইলি দেশের কথা’র নতুন সম্পাদক হন সমীর পাল। ত্রিপুরা সিপিএমের বক্তব্য, কাগজের মালিকানা সংক্রান্ত সমস্ত বদল এবং সম্পাদক পরিবর্তনের সব খবরই সময়-সময় স্থানীয় প্রশাসন এবং রেজিস্ট্রার অফ নিউজপেপারস ফর ইন্ডিয়া’কে (আরএনআই) জানানো হয়। কিন্তু তিন বছর আগে জানানো সত্বেও আরএনআইয়ের ওয়েবসাইটে ‘ডেইলি দেশের কথা’র সম্পাদকের নাম বদল না করে গৌতম দাশের নামই রেখে দেওয়া হয়ছিল।
সম্প্রতি শ্যামল দেবনাথ নামে এক আগরতলার এক ব্যক্তি পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসকের অফিসে একটি আরটিআই মামলা করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘ডেইলি দেশের কথা’ পত্রিকায় একজনের নাম সম্পাদক হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে, অথচ আরএনআইয়ের ওয়েবসাইটে অন্য একজনের নাম রয়েছে সম্পাদক হিসেবে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসক শুনানি শুরু করেন। সিপিএমের পক্ষ থেকে তাদের মুখপত্রের মালিকানা সংক্রান্ত সমস্ত বদলের কথা এবং বৈধ কাগজপত্র জেলা শাসকের অফিসে জমা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আরএনআই’তেও জানানো হয়, কেন তারা সম্পাদকের নাম বদল করেনি।
১ অক্টোবর দুপুরে আরএনআইয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হয় ‘ডেইলি দেশের কথা’র সম্পাদক হিসেবে সমীর পালের নাম। এরপর কাগজ কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত হন, সমস্যা মিটেছে। কিন্তু সূত্রের খবর, এর পরই জেলা শাসকের অফিস থেকে আরএনআই’তে জানানো হয়, ‘ডেইলি দেশের কথা’র মালিকানা সংক্রান্ত কিছু গণ্ডগোল আছে। এবং মালিকানা বদলের যে অনুমতিপত্র সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আগে দিয়েছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করেছেন। এরপর রাত প্রায় সাড়ে ১১ টা নাগাদ জেলা শাসকের অফিস থেকে ‘ডেইলি দেশের কথা’র অফিসে লোক গিয়ে কাগজ বন্ধ রাখার নির্দেশ পৌঁছে দেন। জানানো হয়, কাগজের মালিকানা সিপিএম থেকে সোসাইটি এবং পরে ট্রাস্ট করার যে প্রক্রিয়া তা সব জায়গায় নিয়ম মেনে করা হয়নি।
সিপিএমের অভিযোগ, পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক। নিয়ম না মানার কোনও প্রশ্নই নেই। ত্রিপুরায় জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি কায়েম করেছে বিজেপি সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ত্রিপুরা সিপিএম। সূত্রের খবর, আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে, সম্ভবত বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে যাবে কাগজ পরিচালনার ট্রাস্ট।
Comments are closed.