সাবরীমালায় ইতিহাসঃ সিপিআই (এমএল)-এর প্রাক্তন রাজ্য কমিটি সদস্য বিন্দু এবং সরকারি কর্মী কনকদুর্গার পরিচয় ফেসবুক পেজে
নতুন বছরের শুরুতেই যাবতীয় প্রাচীন রীতি ভেঙে কেরলের সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে ইতিহাস গড়েছেন বিন্দু ও কনকদুর্গা নামে কেরলের বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ দুই মহিলা। পুলিশি সহায়তায় তাঁরা মন্দিরের পুজ্য দেবতা আয়াপ্পার দর্শণও করেন এবং তারপরই এর প্রতিক্রিয়ায় কেরলজুড়ে পথে নেমেছে বিজেপি-আরএসএস। গণ্ডগোল, সংঘর্ষ, তাণ্ডব চলছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।
যুগ যগ ধরে চলা আসা প্রথা এবং রীতি অবজ্ঞা করে সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করায় এই দুই মহিলাকেই এখন নানা হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। কেরল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁদের নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছে।
এর আগেও প্রতিরোধ এড়িয়ে সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন কোঝিকোড়ের কোইল্যান্ডির বাসিন্দা বিন্দু ও মল্লপুরমের অঙ্গদিপুরমের বাসিন্দা কনকদুর্গা। কিন্তু সেবার তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কে এই বিন্দু ও কনকদুর্গা
কিন্তু কী পরিচয় এই বিন্দু এবং কনকদুর্গার, যাঁরা নতুন বছরে ইতিহাস রচনা করলেন?
বিন্দু আম্মিনি, বয়স ৪২ বছর। পেশায় আইনজীবী। বর্তমানে কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কল অফ লিগাল স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। আইনে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়সহ কেরলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বিন্দু, পরে যোগ দেন সিপিআই (এমএল)এ। ছাত্র রাজনীতি করার সময় কেরল বিদ্যার্থী সংগঠন নামে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের প্রথম সারির নেত্রীও ছিলেন তিনি। কেরলের পথনামথিট্টার বাসিন্দা বিন্দু আম্মিনি কেরল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর নিজের পেশা শুরু করেন কৈলান্ডি কোর্টে। তাঁর স্বামী হরিহরণ অধ্যাপক। কেরল সিপিআই (এমএল) এর তরফে জানানো হয়েছে, বিন্দু বছর দশেক আগে তাদের সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সিপিআই (এমএল) এর কেরল রাজ্য কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। যদিও এখন আর তিনি সিপিআই (এমএল) এর সঙ্গে যুক্ত নন।
অন্যদিকে, মন্দিরে প্রবেশকারী অন্য মহিলা বছর ৪৪ এর কনকদুর্গা মল্লপুরমের অঙ্গদিপুরমের বাসিন্দা। তিনি কেরলের সরকারি কর্মী। বর্তমানে কেরল স্টেট সিভিল সাপ্লায়েজ কর্পোরেশনে কর্মরত।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় হয় বিন্দু ও কনকদুর্গার। সাবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের সমর্থনে সম্প্রতি ‘নভোথানা কেরলাম সাবরীমালাইলেখু’ নামে স্থানীয় ভাষায় এই ফেসবুক পেজটি তৈরি করা হয়। যে সমস্ত মহিলা সাবরীমালায় প্রবেশ করতে চান তাঁদের নিয়েই এই ফেসবুক পেজটি চালু হয় সম্প্রতি। এই ফেসবুক পেজেই মন্দিরে প্রবেশের ব্যাপারে কথা হয় বিন্দু এবং কনকদুর্গার।
গত ২৪ ডিসেম্বরও সাবরীমালায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বিন্দু এবং কনকদুর্গা। কিন্তু সেই যাত্রায় ব্যর্থ হয় তাঁদের সেই প্রচেষ্টা। সেই খবর জানাজানি হতেই হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা বিন্দুর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন বলে খবর। সে সময় কনকদুর্গা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা যে কোনও মূল্যে মন্দিরে প্রবেশ করবেনই। কারণ, এটি তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এরপর গত এক সপ্তাহে তাঁরা প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। মঙ্গলবার মাঝরাত ১ টা নাগাদ তাঁরা সাবরীমালা পাহাড়ে মিলিত হন প্রথমে। তারপর প্রায় দু’ঘন্টা পায়ে হেঁটে বুধবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ পুলিশি সহায়তায় প্রবেশ করেন মন্দিরে। তৈরি হয় নয়া ইতিহাস।
Comments are closed.