নেট যুগে ‘ভাইরাল’, ‘ফলোয়ার্স’ ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। প্রায় রোজ দিন কেউ না কেউ নানা কান্ড ঘটিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছেন। ইন্টাসগ্রাম, ফেসবুকে ফলোয়ার্স বাড়াতে সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে আম-আদমি অনেকেই নানান ফন্দি ফিকির আটছেন। কিন্তু ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার্স বাড়াতে আস্ত একজনকে খুন করে সেই খুনেরই ভিডিও আপলোড করতে চেয়েছে কেউ, এমন ঘটনা ভারতে কার্যত বিরল। আরও চাঞ্চল্যকর বিষয়, খুন করেছে তিন কিশোর। যাদের বয়েস ১৫, ১৬ এবং ১৭।
নর্থওয়েস্ট দিল্লির এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি জনপ্রিয় তেলেগু সিনেমা ‘পুষ্পা, দ্য রাইজ’ থেকে প্রভাবিত হয়ে নর্থওয়েস্ট দিল্লির ১০-১৫ জন কিশোর মিলে একটি ‘গ্যাং’ তৈরি করে। নিজেরই গ্রুপের নাম রাখে ‘বদনাম গ্যাং’। সিনেমাটা দেখে তারা এতটাই প্রভাবিত হয় যে ছবির নায়ক আল্লু অর্জুনের মতো হাবভাব চালচলনও নকল করতে শুরু হয়।
১৯ জানুয়ারি ওই গ্রুপেরই তিন সদস্য স্থানীয় একটি পার্কে গুলি ডান্ডা খেলছিল। সেই সময় এক বছর ২৪-এর যুবক এসে তাদের খেলতে বাধা দেয়। শিবু হোসেন নামে ওই যুবকের সঙ্গে প্রথমে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় তিন কিশোরের। তারপর ৩ জন্যেই শিবুর উপর চড়াও হয়। বেধড়ক মারধর করার পর দুই কিশোর ধারাল অস্ত্র দিয়ে শিবুকে কোপাতে শুরু করে, আর একজন পুরো ঘটনার ভিডিও করে। গ্রেফতারের পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত এক কিশোর জানায়, তাদের পরিকল্পনা ছিল হত্যার নৃশংস ওই ভিডিও ইন্সটাগ্রামে আপলোড করলে তারা মুহূর্তের জনপ্রিয় হয়ে যাবে।
নর্থওয়েস্টের ডিসিপি উষা রঙ্গনানি এদিন সংবাদমাধ্যমেকে জানান, প্রথমে তাঁরা একটি স্থানীয় হাসপাতালে থেকে ঘটনার কথা জানতে পারে, পরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ১২ ঘন্টার মধ্যে ওই তিন কিশোরকে গ্রেফতার করে।
তিন কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় তদন্তকারীরা। উষা রঙ্গনানি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তিন অভিযুক্তই জানিয়েছে, সম্প্রতি তারা তেলেগু ছবি ‘পুষ্পা’ এবং ‘ভুকাল’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ দেখেছে। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও তারা একাধিক গ্যাংস্টারকে ফলো করে। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের প্রশ্নের মুখে অভিযুক্ত ৪ জনের বিস্ফোরক উক্তি, গ্রেফতার হওয়া বা জেলে যাওয়া নিয়ে তারা আদৌ ভীত নয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, গ্রেফতার হলেও তিন থেকে ৬ মাসের মধ্যেই তারা ছাড়া পেয়ে যাবে।
ওই কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ড ঘেঁটেও তদন্তকারীদের হাতে নানা তথ্য উঠে এসেছে। তিন জনেই সিনেমার গ্যাং স্টারদের অনুকরণ করে ভিডিও করত। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া এক কিশোর নিজের সম্পর্কে লিখে রেখেছে, ‘ঠিকানা- কেস নম্বর ৩০৭..৩০২। উল্লেখ, আইপিসি সেকশনে ৩০২ খুন এবং ৩০৭ খুনের চেষ্টার ধারা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ওই তিন কিশোরের কাউন্সিলং করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ওই গ্যাং এর বাকিদের খোঁজ চলছে। ওই তিন কিশোরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়া এবং তার আগ্রাসন নিয়ে ফের একবার দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
Comments are closed.