পঞ্চায়েত সদস্য থেকে রাইসিনা হিলের দৌড়ে, মোদীর মতোই চমকপ্রদ তাঁদের প্রার্থীর যাত্রাপথ; চিনে নিন দ্রৌপদী মুর্মুকে 

একজন চা-ওয়ালা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যদিও প্রথম জীবনে নরেন্দ্র মোদীর চা বিক্রি নিয়ে বিরোধীদের অনেকেই নানারকম প্রশ্ন তোলেন। বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রাখলেও সমাজের ওই স্থর থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের যাত্রাপথ নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। তবে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে গুজরাটের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেদিক থেকে তাঁর দলের রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থীর রাজনৈতিক জীবন মোদীর মতো ওজনদার নয়। তাই দু’জনের তুলনা করাটা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী, দ্রৌপদী মুর্মু দুজনের রাজনৈতিক উত্থানই সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। 

১৯৫৮ সালে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বাইদাপোসি-তে  সাঁওতালি পরিবারে জন্ম দ্রৌপদী মুর্মুর। কর্মজীবনের শুরু স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টার, রায়রংপুর-এ শিক্ষকতা করেছেন। রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে। ১৯৯৭ সালে রায়রংপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। 

দক্ষ হাতে নগর পঞ্চায়েতের কাজ সামলানোর পাশপাশি মন দেন সংগঠনের কাজেও। বিজেপির তফসিলি উপজাতি মোর্চার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। এরপর ২০০০ সালে নির্বাচনে জিতে ওড়িশা বিধানসভায় পা দেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজেপি-বিজেডি জোট সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন তিনি। প্রথম দফায় শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরে পরিবহন, পশুপালন এবং মৎস দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী হন। 

বিধায়ক ও মন্ত্রী থাকাকালীনও নিজের কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০০৭ সালে সেরা বিধায়ক হিসেবে ‘নীলকন্ঠ’ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৯ সালে বিজেডি’র সঙ্গে জোট ভেঙে গেলেও বিজেপির প্রার্থী হিসেবে জয় অব্যাহত রাখেন দ্রৌপদী। এরপর ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন তিনি। দ্রৌপদী মুর্মুই ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল। এবং একই সঙ্গে রাজ্যপাল হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদও সম্পূর্ন করেন। 

NDA জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে শুরু থেকেই দ্রৌপদী মুর্মুর নাম নিয়ে জল্পনা ছিল। জানা যায়, ২০১৭ সালেও একবার রাইসিনা হিলের বাসিন্দা হওয়ার দৌড়ে তাঁর নাম ছিল। যদিও সে সময় বিহারের তৎকালীন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। 

রাজনৈতিক জীবনে সেই অর্থে কোনও চ্যালেঞ্জ-এর মুখে না পড়লেও দ্রৌপদী মুর্মুর ব্যক্তি জীবনে একাধিক ঘাত প্রতিঘাত এসেছে। দুই পুত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। তাঁর স্বামীও প্রয়াত হয়েছেন। এক মেয়ে রয়েছে তাঁর। ব্যক্তিগত জীবন যন্ত্রণার হলেও নিজের কাজে তার প্রভাব পড়তে দেননি। বিরোধী জোটের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে পরাজিত করতে পারলে তিনিই হবেন দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। 

 

Comments are closed.