সদ্য করোনা কাটিয়ে ওঠা এবিপি নিউজের সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্রকে আটকাতে বেআব্রু UP পুলিশ! হাথরসে তাঁর ভূমিকা ভাইরাল দেশজুড়ে
তনুশ্রী পাণ্ডের পর প্রতিমা মিশ্র, আরও এক সাহসী সাংবাদিকের নাছোড়বান্দা ভূমিকায় ফের বেআব্রু উত্তর প্রদেশ পুলিশ। ২ অক্টোবর, শুক্রবার এবিপি নিউজের সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্র হাথরসের ধর্ষিতার বাড়ি যাওয়ার চেষ্টাকে যোগীর পুলিশ যেভাবে প্রতিহত করল, সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল দিনভর। অসমসাহসী প্রতিমাকে আটকাতে মাথাগরম করে উত্তর প্রদেশ পুলিশের এক আধিকারিক তাঁকে চোরও বলে ফেললেন। যদিও তাতে দমানো যায়নি প্রতিমাকে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের ভূমিকা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে এক সময় কার্যত ধরনাও দেন তিনি।
পরনে সাদা কুর্তা আর জিন্স, মুখে মাস্ক আর একহাতে চ্যানেলের বুম বা মাইক। মূল রাস্তায় বাধা পেয়ে জমির আলপথ ধরে হাথরসের নির্যাতিতা দলিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এগিয়ে চলেছেন এক সাংবাদিক। আর সামনে-পিছনে পুলিশ প্রতিনিয়ত বাধা দিচ্ছে তাঁকে। যেন তিনিই অন্যায় করছেন! তাতেও সাংবাদিককে এগোতে মরিয়া দেখে এক পুলিশ অফিসার চোর বলে মন্তব্য করে বসলেন তাঁকে! বললেন, চোরের মতো যাচ্ছেন কেন? এরপরও বিন্দুমাত্র মাথাগরম না করে প্রতিমা পাল্টা পুলিশকে প্রশ্ন করেন, চোর কাকে বলে? আমি ধর্ষিতার বাড়ি যাচ্ছি, আমাকে চোর বলছেন কেন? বেকায়দায় পুলিশ আধিকারিক আমতা-আমতা করতে থাকায় প্রতিমা ফের বলেন, আমরা যাচ্ছি ঘটনার ওপর থেকে পর্দা সরাতে, আর আপনারা পর্দা ঢাকছেন, আবার আমাকেই চোর বলছেন? পুলিশের সঙ্গে এবিপি নিউজের প্রতিমা মিশ্রর বাদানুবাদ মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয় গোটা দেশে।
রাতের অন্ধকারে পরিবারের অনুপস্থিতে কীভাবে উত্তর প্রদেশ পুলিশ নির্যাতিতাকে দাহ করেছে তার পর্দাফাঁস করেছিলেন ইন্ডিয়া টুডে-র সাংবাদিক তনুশ্রী পাণ্ডে। আর শুক্রবার এবিপি নিউজের সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্রর সৌজন্যে সারা দেশ দেখল কীভাবে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।
প্রতিমাকে জোর করে গাড়িতেও তুলেছিল পুলিশ। যদিও নির্ভীক এই সাংবাদিক তাতে এতটুকু বিচলিত না হয়ে গাড়িতে বসেই লাইভে দেখিয়েছেন এই দৃশ্য। ফিরে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গলা ভেঙে গিয়েছে, কিন্তু স্বর স্তব্ধ হয়নি তাঁর।
কিন্তু যে প্রতিমা মিশ্র শুক্রবার উত্তর প্রদেশ পুলিশের ভূমিকা দেশের সামনে আনলেন, চেনেন তাঁকে?
গুজরাতের মেহসেনা জেলার বেচার গ্রাম। এখানে এই একুশ শতকে দাঁড়িয়েও দলিতরা কুঁয়ো থেকে জল নিতে পারেন না। ‘নীচু জাত’ হওয়ার দরুণ কীভাবে এক যুবক ২৫ বছর ধরে গ্রামের কুঁয়োর ধারে ঘেঁষতে পারেন না, গুজরাতের এই অখ্যাত গ্রামটিতে দলিত মহিলা ও পুরুষ কীভাবে পানীয় জলের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন, তা কয়েক বছর আগে তুলে ধরেছিলেন এবিপি নিউজের সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্র। দেখিয়েছিলেন, তেষ্টায় ছাতি শুকিয়ে গেলেও সেই গ্রামের উঁচু জাতের কারও জন্য অপেক্ষা করতে হোত দলিত পরিবারগুলিকে। কেউ এসে কুঁয়ো থেকে জল তুলে তাঁদের কলসিতে ঢেলে দেবেন, আর তারপর তা বাড়িতে নিয়ে যাবেন দলিতরা। গুজরাত রাজ্যের এই ছবি তুলে ধরে ২০১৭ সালে রামনাথ গোয়েঙ্কা অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স ইন জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্র।
প্রতিমার জন্ম ও বড়ো হওয়া মুম্বইয়ে। তবে কলেজ জীবন কাটিয়েছেন দিল্লিতে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মহারাজা আগ্রাসেন কলেজ থেকে জার্নালিজম বিষয়ে স্নাতক হন। তার পর ২০০৯ সালে সিএনএন নিউজ ১৮ সংবাদমাধ্যমে ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেন প্রতিমা। হাতে কলমে তিন বছর সাংবাদিকতা শিখে ২০১২ সালে চাকরি পান এবিপি নিউজ সংবাদমাধ্যমে। অ্যাঙ্কর ও রিপোর্টার দুই ভূমিকাতেই সমান স্বচ্ছন্দ প্রতিমা মিশ্রর পরিচিতি অবশ্য নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনার সময়। প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীর সেই গণধর্ষণ ও খুনের মামলার রিপোর্টিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন প্রতিমা। সেটাই ছিল তাঁর পেশাজীবনের প্রথম বড়ো অ্যাসাইনমেন্ট।
গত অগাস্ট মাসে করোনা হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘদিন আইসোলেশনে ছিলেন। সুস্থ হয়েই আবার চেনা ময়দানে নেমে পড়েছেন। ছুটে গিয়েছেন যোগী রাজ্যে এক দলিত কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তাঁর পরিবারের কথা শুনতে। পর্দাফাঁস করছেন যোগী রাজ্যের পুলিশি ভূমিকার।
Comments are closed.